বাড়ি আছে। নেই পরিকাঠামো। —নিজস্ব চিত্র।
চারপাশে ছোটবড় কলকারখানা নেহাত কম নয়। নগরায়নের ধাক্কায় পাল্টাচ্ছে এলাকার চেহারাও। কিন্তু হাওড়ার উলুবেড়িয়া এবং আলমপুরে অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র দু’টিতে ইঞ্জিন ও কর্মী সঙ্কট মিটল না এখনও। ফলে, এখনও গ্রামীণ এলাকায় অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন দুই কেন্দ্রের কর্মীরা। সমস্যা মেটাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা দরবারও করেছেন। বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীরাও দুই কেন্দ্রের অগ্নি নির্বাপণ পরিকাঠামোর উন্নয়নের দাবি তুলেছেন।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় কোনও অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র ছিল না। তখন গ্রামীণ এলাকায় কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে হাওড়া শহর বা মেদিনীপুর থেকে দমকলের ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করত। ২০০৭ সালে উলুবেড়িয়া অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্রটি তৈরি হয়। ফলে, গ্রামীণ এলাকায় অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হয়।
কিন্তু উলুবেড়িয়া থেকে আলমপুর, সাঁকরাইল, ডোমজুড় যাওয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলমপুরে মুম্বই রোডের কাছে আর একটি অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়। এই কেন্দ্র থেকে আলমপুরের জালান কমপ্লেক্স, সাঁকরাইল, ডোমজুড়, এমনকী শলপ, সাঁত্রাগাছি-সহ শহর এলাকার বিভিন্ন জায়গাতেও দ্রুত পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। প্রাথমিক ভাবে এখানে দমকলের একটি ইঞ্জিন রাখা হয়, পরে তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করে দমকল বিভাগ।
এর পরে দেড় বছর কেটে গিয়েছে। ইঞ্জিন ও কর্মীর সংখ্যা বাড়েনি আলমপুর কেন্দ্রে। বর্তমানে সেখানে ১৮ জন দমকলকর্মী রয়েছেন। শূন্যপদ রয়েছে ২০টি। ইঞ্জিন রয়েছে একটি। আরও অন্তত চারটি ইঞ্জিন থাকলে কাজের সুবিধা হয় বলে জানিয়েছেন কর্মীরা। উলুবেড়িয়ার কেন্দ্রে বর্তমানে কাজ করছেন ৪০ জন দমকলকর্মী। শূন্যপদ রয়েছে ৩৫টি। ইঞ্জিন রয়েছে দু’টি। আরও দু’টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন বলে কর্মীরা জানান। একই সঙ্গে তাঁরা মনে করেন, বাগনান এলাকায় আর একটি অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র তৈরি করা হলে আমতা, জয়পুরের মতো এলাকাগুলিতে অগ্নিকাণ্ড দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে দমকল বিভাগের হাওড়ার ডিভিশনাল অফিসার সমীর চৌধুরী বলেন, “আলমপুর অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্রের জন্য ইঞ্জিনের বরাত দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই ওখানে ইঞ্জিন যাবে। উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের জন্যও ইঞ্জিনের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। কর্মী নিয়োগও দ্রুত শুরু হবে আশা করি।”
জালান কমপ্লেক্স, সাঁকরাইল ফুড পার্ক, ডোমজুড় মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার ছোটবড় কলকারখানা আছে। উলুবেড়িয়া, পাঁচলাতেও পাঁচশোরও বেশি কারখানা রয়েছে। ওই সব এলাকায় অগ্নিকাণ্ড হলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য মূলত উলুবেড়িয়া এবং আলমপুর কেন্দ্র থেকেই ইঞ্জিন নিয়ে ছুটতে হয় দমকলকর্মীদের। কর্মী কম থাকায় অনেক সময়েই কেন্দ্র ফাঁকা রেখেও আগুন নিয়ন্ত্রণে যেতে হয় তাঁদের।
আলমপুর কেন্দ্রের এক দমকল কর্মীর কথায়, “গাড়ি কম থাকায় জলও বেশি নেওয়া যায় না। ফলে, কোথাও বড় অগ্নিকাণ্ড হলে কাছাকাছি জলের উত্স না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়। আগুন নেভাতে দেরি হয়। ক্ষয়ক্ষতি বাড়ে।” উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের এক কর্মী বলেন, “চারপাশে এত কলকারখানা রয়েছে যে জেলায় গ্রামীণ এলাকায় দমকলের পরিকাঠামো আরও বাড়ানো হলে সুবিধা হয়।”
গত মাসেই বাগনানের পাতিনানে একটি টালি তৈরির কারখানায় আগুন লেগেছিল। উলুবেড়িয়ার দু’টি ও আলমপুরের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে। কিন্তু তাতে সময় লাগে। কর্তৃপক্ষের দাবি, দমকলের ইঞ্জিন কম থাকায় এবং তারা দেরিতে আসায় আগুন বেশি ছড়িয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই হয়। মাস ছয়েক আগে জালান কমপ্লেক্সে একটি কারখানার আগুন নেভাতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল আলমপুরের দমকলকর্মীদের।
এই অবস্থাটারই দ্রুত পরিবর্তন চান দুই কেন্দ্রের কর্মীরা।