ভিক্টোরিয়া জুট মিল। নিজস্ব চিত্র।
আট দিন বন্ধ থাকার পরে, রবিবার থেকে ফের কাজ শুরু হল ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া জুটমিলে।
‘ফিনিশিং’ বিভাগের ১৪ জন শ্রমিককে বসিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ওই জুটমিলের বাকি শ্রমিকেরা গত ২০ জুন কাজে যোগ দেননি। তার পরেই শ্রমিক অসন্তোষকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে মিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। শনিবার ভদ্রেশ্বর পুরসভার হলঘরে এ নিয়ে এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত, চন্দননগরের সহকারী শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত, মিলের শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এবং মিলের সিইও রাজকুমার সিংহ এবং পার্সোনাল ম্যানেজার অরুণ সিংহ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকেই রবিবার থেকে মিলে কাজ শুরুর কথা কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন। তবে, ওই ১৪ জনকে এ দিনও কাজে নেওয়া হয়নি। আগামী মঙ্গলবার চন্দননগরের মহকুমাশাসকের দফতরে ফের ওই শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
মিলের পার্সোনাল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত জানান, মিলটির কাজ বন্ধ থাকায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক বিপাকে পড়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকদের বুঝিয়ে মিলটিতে কাজ চালু করা হয়েছে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ভদ্রেশ্বরেরই নর্থব্রুক জুটমিলের সিইও-কে পিটিয়ে হত্যার পরে চটশিল্পের সঙ্কটের কথা সামনে আসে। গত ১৯ জুন ভিক্টোরিয়া জুটমিলের ‘ফিনিশিং’ বিভাগের এক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের টানাপোড়েন চলে। ওই বিভাগের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখান। তার জেরেই ১৪ জন শ্রমিককে সাময়িক ভাবে বসিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে পরের দিন বাকি শ্রমিকেরা কেউ কাজে যোগ দেননি। তার পরেই কর্তৃপক্ষ মিলে কাজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেন।
এ দিন মিল খোলায় হাসি ফোটে শ্রমিকদের মুখে। খুশি শ্রমিক সংগঠনগুলিও। তবে, বসিয়ে দেয়া ১৪ জন শ্রমিককে ফের কাজে বহালের দাবিও তুলেছে তারা। যে ভাবে মিলটিতে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন কেউ কেউ। মিলের তাঁত বিভাগে প্রায় ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন মনোজ যাদব। তিনি বলেন, “মিল আগেও অনেক বার বন্ধ হয়েছে। তবে, এ বার যে ঘটনাকে শ্রমিক অসন্তোষের কারণ হিসেবে দেখিয়ে মিলে কাজ বন্ধ করা হয়েছিল, তা আদৌ গুরুতর নয়। শ্রমিকেরা কাজ করার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়তেই পারেন। তা নিয়ে অত টানাপোড়েন হবে কেন?” বসিয়ে দেওয়া শ্রমিকদের মধ্যে অনিল মাহাতো বলেন, “আমরাও যাতে কাজে যোগ দিতে পারি, এ বার কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা করুন।”