আবাসনে বধূ-খুনে পুলিশ অন্ধকারে, স্বামী অধরাই

বি-টেক পড়ুয়া স্ত্রী সপ্তাহান্তে আসতেন রিষড়ার বাগখালে স্বামীর আবাসনে। তেমনই এসেছিলেন শনিবার। কিন্তু সোমবার সকালে সেই আবাসন থেকে রাধা কুমারী (২২) নামে ওই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলার ঘটনাকে ঘিরে রহস্য ক্রমশ দানা বেঁধেছে। কেননা, ওই ঘটনার পর থেকেই উধাও রাধার স্বামী শচীন মণ্ডল। পুলিশ এবং রাধার বাপেরবাড়ির লোকজনের সন্দেহ, শচীনই স্ত্রীকে ছুরিজাতীয় কিছু দিয়ে কুপিয়ে খুন করে উধাও হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রিষড়া শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৮
Share:

নিহত রাধাকুমারী। পাশে স্বামী শচীন।-নিজস্ব চিত্র।

বি-টেক পড়ুয়া স্ত্রী সপ্তাহান্তে আসতেন রিষড়ার বাগখালে স্বামীর আবাসনে। তেমনই এসেছিলেন শনিবার। কিন্তু সোমবার সকালে সেই আবাসন থেকে রাধা কুমারী (২২) নামে ওই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলার ঘটনাকে ঘিরে রহস্য ক্রমশ দানা বেঁধেছে।

Advertisement

কেননা, ওই ঘটনার পর থেকেই উধাও রাধার স্বামী শচীন মণ্ডল। পুলিশ এবং রাধার বাপেরবাড়ির লোকজনের সন্দেহ, শচীনই স্ত্রীকে ছুরিজাতীয় কিছু দিয়ে কুপিয়ে খুন করে উধাও হয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের হয়েছে থানায়। কিন্তু কী কারণে রাধাকে খুন করা হল, সে ব্যাপারে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে মঙ্গলবারও তেমন কোনও সূত্র জোগাড় করতে পারেননি তদন্তকারী অফিসাররা। তাঁরা মনে করছেন, সম্ভবত রবিবারই খুন হন তরুণী। শচীন ধরা পড়লেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে। এসডিপিও (শ্রীরামপুর) সুবিমল পাল জানান, তরুণীর স্বামীর খোঁজ চলছে। ঘটনার নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

রাধার বাপেরবাড়ি বোকারোর চন্দরপুরা থানার তেলো গ্রামে। তিনি সল্টলেকের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বি-টেক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। মাস ছ’য়েক আগে শচীনের সঙ্গে তাঁর রেজিস্ট্রি-বিয়ে হয়। শচীন আদতে দেওঘরের বাসিন্দা। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে তিনি বাগখালের একটি কারখানায় ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কাজ পান। কর্মসূত্রেই তিনি রিষড়ায় থাকতেন।

Advertisement

পুলিশ ও রাধার বাপেরবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনার জন্য রাধা সল্টলেকেই থাকতেন। শনিবার করে স্বামীর আবাসনে যেতেন। সপ্তাহের অন্য দিন শচীনের সঙ্গে রুমমেট থাকতেন। তিনি শনিবার করে নিজের বাড়িতে চলে যেতেন। সোমবার ফিরতেন। রাধা আবার সোমবার সকালে ফিরে যেতেন সল্টলেকে। ঘরের একটি চাবি থাকত শচীনের কাছে। অন্যটি তাঁর রুমমেটের কাছে।

গত ছ’মাস ধরে এমনটাই চলছিল। কিন্তু গত সোমবার সকালে শচীনের রুমমেট এসে দেখেন, ঘরের দরজা বন্ধ। তালা খুলে ঢুকে তিনি দেখতে পান, রক্তাক্ত অবস্থায় রাধার মৃতদেহ বিছানায় পড়ে রয়েছে। তাঁর গোটা শরীরে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশে খবর দেন। রিষড়া থানার পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠায়। কারখানার ম্যানেজারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাধার বাপেরবাড়ির লোকজন রিষড়ায় আসেন। তাঁরা জানান, পারিবারিক যোগাযোগের মাধ্যমেই রাধার সঙ্গে শচীনের রেজিস্ট্রি-বিয়ে হয়। পরে সামাজিক ভাবেও বিয়ের অনুষ্ঠান হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু ঠিকমতো সংসার শুরু করতে পারার আগেই কী কারণে রাধাকে খুন হতে হল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা।

রাধার ভাই ব্রজকান্ত শরণ বলেন, “দিদির সঙ্গে প্রায় রোজই কথা হত। শনিবারেও মোবাইলে কথা হয়। জামাইবাবুর সঙ্গেও কথা হয়। কিন্তু ওদের মধ্যে কোনও সমস্যা হয়েছে, এমনটা বুঝতে পারিনি। সব কিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছে শচীনই দিদিকে খুন করেছে। পুলিশ ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করুক।”

রাধার জ্যাঠতুতো ভাই অবোধকান্ত শরণ বলেন, “ওদের দু’জনেরই মোবাইল, শচীনের ল্যাপটপ ঘরেই ছিল। শচীন ধরা পড়লেই গোটা ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন