তারকেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়
গুরু-শিষ্যের সম্পর্কই স্কুলের চালিকাশক্তি।
দীর্ঘ নয় দশক ধরে তারকেশ্বেরের বিস্তীর্ণ এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান করে আসছে এই স্কুল। ১৯২৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তারকেশ্বর এস্টেটের রিসিভার অমূল্যচন্দ্র ভাদুড়ি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। স্কুল তৈরিতে এস্টেটের তত্কালীন মোহন্ত মহারাজের অবদানও অনস্বীকার্য। শ্রীরামপুরের মাহেশ থেকে আগত ক্ষেত্রপতি চট্টোপাধ্যায়ের অদম্য উত্সাহে মোহন্ত মহারাজের আনুকূল্যে গড়ে ওঠে এই স্কুল। সেই সময় নাম ছিল তারকনাথ বিদ্যালয়।
অরুণকুমার চক্রবর্তী
প্রধান শিক্ষক
পরে তা পরিবর্তন করে হয় তারকেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এর পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ অলংকৃত করতেন তারকেশ্বরের মোহন্ত মহারাজ। সেই ঐতিহ্যই চলে আসছে। অনেক দূর থেকে ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়তে আসে। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান। প্রতি বছর স্কুলের ফলে তার প্রতিফলও ঘটে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমাদের স্কুলের ফল বরাবরই বেশ ভাল। স্কুলের বহু কৃতিই বর্তমানে দেশে-বিদেশে উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত। খেলাধূলাতেও আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে তারা। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্পর্ক আমাদের প্রাচীন কালে আশ্রমিক গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। যদিও ছাত্রছাত্রীদের আরও ভাল করে পাঠদানের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর নানা সমস্যা রয়েছে স্কুলে। যার মধ্যে প্রধান সমস্যা, শ্রেণিকক্ষের অপর্যাপ্ততা। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার তুলনায় ক্লাসঘরের সংখ্যা কম। ঘাটতি রয়েছে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উন্নত মানের ল্যাবরেটরির। ছাত্রীদের জন্য শৌচাগারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন। যেহেতু অনেক দূর থেকে পড়ুয়ারা আসে তাই বিদ্যালয়ে চত্বরে অবিলম্বে দরকার সাইকেল স্ট্যান্ড। এই সব সমস্যার কিছুটা দূর হলেও পঠনপাঠনে আরও যত্নবান হতে পারবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
• ছাত্রছাত্রী: ২০০০।
• শিক্ষক-শিক্ষিকা: ৪২ জন। পার্শ্বশিক্ষিকা-৩ জন। শিক্ষাকর্মী-২ জন
• গ্রন্থাগারিক: একজন।
• ২০১৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ২২১। উত্তীর্ণ-১৭৬।
শৈবাল ভট্টাচার্য।
প্রাক্তনী
১৯৮৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে এই বিদ্যালয়ে প্রথম পা রেখেছিলাম। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়ে ডাক্তারি পড়েছি কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। স্কুলের সঙ্গে বছর আড়াইয়ের সম্পর্ক হলেও এখন মনে হয় তা যেন ছিল দীর্ঘদিনের। শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের দেখেছি ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁরা কতটা আন্তরিক। বিশেষ করে যাঁরা দুর্বল তাঁদের প্রতি বাড়তি নজর দিতেন তাঁরা। এখনকার কথা বলতে পারব না। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যা দেখি তাতে মনে হয় সেই আন্তরিকতা হারিয়ে যেতে বসেছে। নষ্ট হতে বসেছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধুরতাও। সে দিক থেকে তারকেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসাবে গর্ববোধ করি। ছবি: দীপঙ্কর দে।