কাজ শুরুর বছর ছয়েক পরেও এমনই বেহাল ‘স্টেডিয়াম’। ছবি: তাপস ঘোষ।
২০০৮ সাল। রাজ্যে ক্ষমতায় বামফ্রন্ট। পাণ্ডুয়ায় একটি স্টেডিয়াম তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হয়। তবে আজও তা অসমাপ্ত অবস্থাতেই থেকে গিয়েছে। রাজ্যে পালা বদলের পরেও অগ্রগতি হয়নি কাজের। ফলে গোটা পাণ্ডুয়া জুড়েই খেলাধুলোর ক্ষেত্রে পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবের ছবিটি একই থেকে গিয়েছে।
রাজ্যের নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্রীড়া ক্ষেত্রে প্রসারের লক্ষ্যে পরিকাঠামোগত কিছু কাজ বিক্ষিপ্তভাবে দেখা গিয়েছিল। তা ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়া বা ক্রীড়া সরঞ্জাম দেওয়া যে ভাবেই হোক না কেন। কিন্তু সে সবই অনেকটা কলকাতা ঘেঁষা শহর কেন্দ্রিক উদ্যোগ। বিচ্ছিন্নভাবে রাজ্যের কোনও কোনও অংশে তার প্রতিফলন দেখা গেলেও সার্বিক ক্রীড়ার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশ্নে সে ভাবে কোনও সুরাহা আনেনি। কলকাতা থেকে কিছু দূরে মফস্সলের শহরগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ওই সব উদ্যোগের ছিটেফোঁটাও পৌঁছয়নি।
দক্ষিণবঙ্গের জেলা শহরগুলিতে খেলাধুলোর ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব রাজ্য সরকারের পরিকাঠামোকে অনেকটাই বেআব্রু করে দিয়েছে। খেলার জগতের সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকেরই অভিযোগ, বাম গিয়ে ডান এসেছে। নতুন শরীরে পুরনো জামা চড়েছে। এর বেশি ক্রীড়া ক্ষেত্রে কিছুই হয়নি।
পাণ্ডুয়ায় বাম আমলে জিটি রোড লাগোয়া পি ডব্লু ডি-র বাংলোর কাছে দু’বিঘা জমির উপর ঢাকডোল পিটিয়ে একটি স্টেডিয়াম তৈরির কাজে হাত দেওয়া হয়। পাণ্ডুয়ার তত্কালীন বিধায়ক মাজেদ আলি সেই সময় এ ব্যাপারে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হন। বিধায়ক তহবিলের দশ লক্ষ টাকায় কাজ শুরু হয়। সেখানে একটি ক্লাব হাউস তৈরি হয়। কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক মাঠ জুড়ে স্টেডিয়ামের কাজ আজও অসম্পূর্ণই রয়েছে।
এই মাঠেই পাণ্ডুয়া ফুটবল অ্যাকাডেমি চালু করা হয়ে বেশ কয়েক বছর আগে। অ্যাকাডেমির অন্যতম সংগঠক সুজয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মাঠের মালিকানা সংক্রান্ত কিছু সমস্যা থাকায় স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়নি। এই বিষয়ে বার বার সাংসদ, বিধায়ক, প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। তবে সবাই উদ্যোগী হলে শুধুমাত্র খেলাধুলোর স্বার্থেই স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করার এখনও সুযোগ আছে।”
পাণ্ডুয়া ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলা শুরু করেছিলেন ফুটবলার রহিম নবি। ওই মাঠে খেলেই কলকাতা তথা ভারতের নানা প্রান্তে মাঠ কাঁপিয়েছেন তিনি। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহামেডান--কলকাতার তিন ক্লাবেই খেলেছেন। এখন আইএসএল-এ খেলছেন। তাঁর আক্ষেপ, “পাণ্ডুয়া থেকে নতুন প্রজন্মের ফুটবলার এখন আর তৈরি হচ্ছে না। কোথাও যেন ভাটা পড়েছে। ফুটবল অ্যাকাডেমিকে চাঙ্গা করলেই নতুন ফুটবলার উঠে আসার এই ভাটা কাটবে। খেলাধুলোর পরিকাঠামোগত উন্নয়নও দরকার।”
ভারতীয় এই ফুটবলারের মতোই পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা কমবেশি সবাই অনুভব করছেন। পাণ্ডুয়ার এক্স প্লেয়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্তা জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন,“পাণ্ডুয়ায় অনেক খেলার মাঠ রয়েছে। কিন্তু বহু সময় দেখা যাচ্ছে সেই সব মাঠ খেলা ছাড়াও নানা উত্সব, সভা, মেলার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে মাঠ নষ্ট হচ্ছে। ছেলেরা খেলার জায়গা পাচ্ছে না।” ওই সংস্থার উদ্যোগেই স্থানীয়ভাবে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তাঁদের সংস্থার সঙ্গে রয়েছেন গৌতম পাল, তনুময় বসুদের মতো ফুটবলাররা।
পাণ্ডুয়ায় ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পও রয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগে সে সব চলে। খন্যান কলেজ মাঠে একটি ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প চলে স্থানীয় উদ্যোগে। শ্রীপালা মাঠ, জোড়াপুকুর মাঠ, ক্ষীরকুন্ডি-চন্দ্রহাটি মাঠে স্থানীয় উদ্যোগেই খেলাধুলোর চর্চা হয়। কিন্তু খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সার্বিক পরিকল্পনামাফিক কোনও উদ্যোগ সেইভাবে গড়ে ওঠেনি। তার ফলে ক্রীড়াক্ষেত্রে সেইভাবে সাফল্য অধরাই থেকে গিয়েছে।
পাণ্ডুয়ারই এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “পরিকাঠামোর উন্নয়নই খেলার ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে পারে। সেই জন্য আগে জরুরি খেলার মাঠগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ।” তাঁর আরও বক্তব্য, সবার আগে প্রয়োজন পাণ্ডুয়ায় শুধু সভা-সমাবেশ আর মেলার জন্য কোনও জায়গা চিহ্নত করা। সেই জায়গা বাদে খেলার মাঠকে ওইসব কাজে ব্যবহার করা যাবে না। নচেত্ দেখা যাবে খেলার মাঠে সার্কাস বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাস, মাঠের দফারফা হয়ে গেল।”
তবে পাণ্ডুয়ার মানুষের আক্ষেপ, সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক লাভের অঙ্ক কষে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যার হাত থেকে রেহাই মেলেনি ক্রীড়াক্ষেত্রেরও। আর তাই ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়ন নিয়ে তাঁদের এ যাবত্ হইচই বিফলে গিয়েছে।