এজলাস বয়কট জারি, বিচারকের পক্ষে কৃষ্ণনগর

সমস্যা মিটল না শুক্রবারেও। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করেছিল। তাতেও আইনজীবীরা বয়কটের রাস্তা থেকে না সরায় শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতের দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস অচলই রইল। তবে এ বার এ নিয়ে সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী পক্ষ। পুরুলিয়ায় এ দিন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “উলঙ্গ রাজার সরকার চলছে। যিনি নিজে বিচার করার দায়িত্বে রয়েছেন, সেই বিচারকই বিচারের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমরা আলিপুরে দেখেছি, শ্রীরামপুরেও দেখছি. বিচারককেই বিচার চাইতে হচ্ছে! কোন রাজত্বে বাস করছি আমরা!”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩১
Share:

সমস্যা মিটল না শুক্রবারেও। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করেছিল। তাতেও আইনজীবীরা বয়কটের রাস্তা থেকে না সরায় শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতের দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস অচলই রইল।

Advertisement

তবে এ বার এ নিয়ে সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী পক্ষ। পুরুলিয়ায় এ দিন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “উলঙ্গ রাজার সরকার চলছে। যিনি নিজে বিচার করার দায়িত্বে রয়েছেন, সেই বিচারকই বিচারের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমরা আলিপুরে দেখেছি, শ্রীরামপুরেও দেখছি. বিচারককেই বিচার চাইতে হচ্ছে! কোন রাজত্বে বাস করছি আমরা!”

এ দিনও সকাল ১০টার কিছু পরে বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহা এজলাসে ওঠেন। তবে যথারীতি তাঁর এজলাসে কোনও আইনজীবী ঢোকেননি। বেলা দেড়টা নাগাদ পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আইনজীবীদের সর্বোচ্চ সংগঠন রাজ্য বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা শ্রীরামপুর আদালতে আসেন। ওই দলে ছিলেন সংগঠনের চেয়ারম্যান অসিতবরণ বসু, প্রাক্তন চেয়ারম্যান আনসার আলি মণ্ডল, সনাতন মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যরা। আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়। মন্দাক্রান্তাদেবীকে বদলি করা না-হলে তাঁর এজলাস বয়কট চলবে বলে প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। মন্দাক্রান্তা দুর্ব্যবহার করেন এবং পক্ষপাতমূলক বিচার করেন বলেও তাঁদের অভিযোগ। প্রতিনিধি দল তাঁদের জানায়, বিষয়টি হাইকোর্টকে জানানো হবে। দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তা মানবেন কি না, সে কথা জানতে চান বার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। বিক্ষোভকারীরা বলেন, সম্মানজনক সুরাহা না-হলে তাঁরা মানবেন না।

Advertisement

কাউন্সিলের সদস্যরা এর পরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (দ্বিতীয় কোর্ট) সুমিত্রা রায়, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক উত্তম রায় ও বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার সঙ্গেও কথা বলেন। কাউন্সিলের সদস্যরা বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের বলেন মন্দাক্রান্তাদেবীর সঙ্গে কথা বলতে। আইনজীবীরা অবশ্য রাজি হননি।

আন্দোলনকারী আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রের সঙ্গে শীঘ্রই দেখা করবেন। শুক্রবার জয়ন্তবাবু বলেন, “ওঁরা আমার সঙ্গে দেখা করে ওদের বক্তব্য জানাবেন বলেছেন। তবে কবে তাঁরা আসবেন জানাননি।”

বিক্ষোভকারীরা বার বার দাবি করছেন এর আগে কৃষ্ণনগর আদালতে থাকার সময়েও বিচারক সাহা আইনজীবীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। এমনকী এই অভিযোগও করা হচ্ছে, তিনি আইনকানুন বোঝেন না। তবে কৃষ্ণনগর আদালতের আইনজীবীরা এ দিন অন্য কথা বলেন। সেখানকার আইনজীবী রমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক বার এজলাসের ভিতরেই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন মন্দাক্রান্তা। রমেন্দ্রনাথবাবু এ দিন বলেন, “আমার সঙ্গে এক বার ওঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়েছিল। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া বা রায়দানে কোনও দিন তার প্রভাব পড়েনি। ভুলটা আমারই হয়েছিল।” ওই আদালতের আর এক প্রবীণ আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘বিচারক হিসাবে মন্দাক্রান্তা সাহা অত্যন্ত দক্ষ।”

এক সময় বীরভূম জেলার সিউড়ি মহকুমা আদালতে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। সিউড়ি বার অ্যাসোশিয়েসনের সহসভাপতি রণজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “উনি আইনে দক্ষ। দ্রুত বিচার করতে আগ্রহী। অনেক ক্ষেত্রে আইনজীবীরা সময় মতো সাক্ষী জোগাড় করে উঠতে পারেন না। তা নিয়েই হয়তো গোলমাল!”

ফেডারেশন অব বার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস রায় অবশ্য বলেন, “বিচারক হিসাবে তাঁর যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। তবে অনেক ক্ষেত্রে আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার হয়তো আন্তরিক ছিল না।” আর এক সরকারি আইনজীবী বিকাশ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “বিচারক হিসাবে মন্দাক্রান্তাদেবী খুবই যোগ্য। কিন্তু আইনজীবীদের সঙ্গে ব্যবহারটা সব সময় ঠিক করেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন