কাজ শুরুই হয় ইনস্পেক্টর এলে

ভোর ৫টা ২০ থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ষাট পেরিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ মালিক। এসেছেন ছেলের হারিয়ে যাওয়া রেশম কার্ড ফের নতুন করে তৈরি করাতে। অত ভোরে এসেও অবশ্য লাইনে বেশ কয়েকজনের পিছনেই দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share:

ঘড়িতে ১০টা। দফতরের বাইরে দীর্ঘ লাইন।

ভোর ৫টা ২০ থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ষাট পেরিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ মালিক। এসেছেন ছেলের হারিয়ে যাওয়া রেশম কার্ড ফের নতুন করে তৈরি করাতে। অত ভোরে এসেও অবশ্য লাইনে বেশ কয়েকজনের পিছনেই দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৯টা ছুঁয়েছে। এতক্ষণে শ’দুয়েক মানুষের লাইন হয়ে গিয়েছে। ঘড়ির কাঁটায় পৌনে ১০টা। চড়া রোদ মাথায় নিয়ে দাঁড়ানো রবীন্দ্রনাথবাবু উসখুস করে উঠলেন, “বাবুদের এখনও তো ধারে কাছে দেখতে পাচ্ছি না।” মিনিট দশেক পরে অধৈর্য তাঁর মতো আরও অনেকে। কিন্তু তাঁদের কথা কে শোনে। ঘড়িতে ঠিক দশটা। কিন্তু কোথায় কর্মীরা! বস্তুত বৃহস্পতিবার আরামবাগ মহকুমা খাদ্য সরবরাহ দফতরের বাইরে দেখা গেল এমনই ছবি।

১০ টা বেজে ৫ মিনিট। লাইনে দাঁড়ানো লোকজন রীতিমত ক্ষুব্ধ। এমন সময়েই এলেন অ্যাকাউন্টান্ট অর্জুন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। একটু পরে ১০টা ৭ মিনিটে ঢুকলেন কনট্রাক্টচুয়াল এস আই সুকুমার ভট্টাচার্য। দেরি কেন জানতে চাইতেই চেয়ার-টেবিল গোছাতে গোছাতে তাঁর উত্তর, “বসুন, একটু গল্প করা যাক। ইনস্পেক্টর তো আসেন সাড়ে ১০টা নাগাদ। তার পর কাজ শুরু।” অনুরোধ এড়িয়ে বাইরে বেরোতেই একজনের প্রশ্ন, “কখন কাজ শুরু হবে বলতে পারেন। সেই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। আমাদের আর কোনও কাজ নেই? ” ফের ঢুকে পড়লাম অফিসে। ঘড়িতে প্রায় সওয়া ১০টা। আস্তে আস্তে লাইনে দাঁড়ানো লোকজন অফিসে ঢুকতে শুরু করেছেন। যদিও এখনও দেখা নেই ইনস্পেক্টরের। ঘড়ির কাঁটায় ১০টা বেজে ৩২ মিনিট। অফিসে এসে ঢুকলেন ইনস্পেক্টর প্রশান্ত কুমার দে। আপনি কি রোজই এই সময়ে আসেন? প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত। পরক্ষণেই মুখ ঝামটে বলেন, “দেখছেন না কাজে ব্যস্ত। আমার কাজই শুরু হয় সাড়ে ১০টায়।”

Advertisement

১০টা ৩৮ মিনিট। অফিসে এলেন মহকুমা চিফ ইনস্পেক্টর সুকুমার মুদি। ক্যামেরায় ছবি তুলতে দেখে হাসতে হাসতে বললেন, “স্ত্রী অসুস্থ। বাড়িতে কাজের জন্য দেরি হয়ে গেল।”

এ দিক ও দিক ঘুরে দেখা মিলল না মহকুমা খাদ্য আধিকারিক দীপ্তি বাউরির। দফতরেরই এক কর্মী জানালেন, উনি দফতরেরই আর একটি অফিসে আছেন। তাঁর দফতরের কর্মীদের উপস্থিতির এমন ছবি তুলে ধরতেই আধিকারিকের উত্তর, “বেশিরভাগ কর্মীরই বাড়ি দূরে। তাই দেরি হয়।” কিন্তু সে জন্য সাধারণ মানুষের হয়রানি! আর উত্তর পাওয়া গেল না।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement