বন্ধ নিকাশি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
কোথাও বড় নদর্মার ভিতর থেকে উঠেছে বাড়ির থাম। কোথাও বা নিকাশি নালা বন্ধ করে গড়ে উঠেছে কারখানা। কোথাও আবার নিকাশি নালা ঢাকা পড়েছে দোকানের সিমেন্টের স্ল্যাবে।
গোটা হাওড়া জুড়ে নিকাশির ছবি এমনই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিকাশি সংস্কারের ব্যাপারে পূর্ববর্তী পুর বোর্ডের উদাসীনতা। ফলে নতুন পুরবোর্ড এ বর্ষায়ও হাওড়া শহরের বাসিন্দাদের জল জমার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। তবে ছবি বদলাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে হাওড়া পুরসভা। বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি। যে কমিটিতে রয়েছে রেল, কেএমডিএ, কেএমডব্লিউএসএ, হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা। এই কমিটি ইতিমধ্যে তিনটি বৈঠক সেরে ফেলেছে। যদিও মেয়র পারিষদ (নিকাশি) শ্যামল মিত্র স্বীকার করেছেন, কমিটির সিদ্ধান্ত মতো কাজ করতে হলে আরও সময় প্রয়োজন। হাতে সময় নেই। ফলে এ বছর ছবিটা পাল্টাবে না।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া শহরে নিকাশির নালা রয়েছে ৫২৩ কিলোমিটার। সুয়ারেজ ব্যবস্থা রয়েছে ৬৫ কিলোমিটার। কাঁচা নর্দমা রয়েছে ৫০ কিলোমিটার। যার অধিকাংশই উন্মুক্ত। আর সে কারণেই জঞ্জাল, বিভিন্ন দোকানের অব্যবহৃত জিনিস, ডাবের খোলা, চায়ের ভাঁড় দেদার ফেলা হচ্ছে ওই সব খোলা নর্দমায়। ফলে নর্দমাগুলি ভরে যাচ্ছে আবর্জনায়। অন্য দিকে উত্তর হাওড়া ও মধ্য হাওড়ার শিল্পাঞ্চলে নর্দমার উপর সিমেন্টের স্ল্যাব পেতে এবং হাইড্র্যান্টের উপরে বাড়ির পিলার তৈরি হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত অনেক জায়গায় বন্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদেরই।
তিনি বলেন, “আগের পুরবোর্ডের সময় বহু নর্দমা উপরে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। ফলে বহু নিকাশি পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শহরের মধ্যে থাকা বেআইনি খাটাল। আমরা অভিযান চালিয়ে বহু খাটাল তুলে দিয়েছি।” তিনি জানান, যে সব বাড়ি বা কারখানার পিলার হাইড্রান্টের উপরে তৈরি হয়েছে সেই সব কারখানার জরিমান করা হবে। প্রয়োজনে ওই অংশ ভেঙে দেওয়া হবে। নর্দমার ওপর যে সব বেআইনি দখলদার বা সিমেন্টের স্ল্যাব রয়েছে তাও ভেঙে দেওয়া হবে।
গত ডিসেম্বরে তৃণমূল, পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে গত চার মাসে অধিকাংশ নিকাশি নালা থেকে দীর্ঘ দিন জমে থাকা আবজর্না এবং পাঁক তোলার কাজ শুরু করে। সংস্কার করা হয়েছে ড্রেনেজ ক্যানেল রোডের ডবল ব্যারেল নিকাশি নালা-সহ পচা খাল ও অন্যান্য নিকাশি নালার। সংস্কার করা হচ্ছে টিকিয়াপাড়া রেল স্টেশন থেকে বেলেপোল ও পঞ্চাননতলা থেকে কদমতলা পর্যন্ত সব নিকাশি নালার। এ জন্য গত চার মাসে খরচ হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা।
হাওড়া শহরে জল নামাবার জন্য রয়েছে মোট ছ’টি ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন। এগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে কেএমডব্লিউএসএ-র। অভিযোগ, গত ১০ বছর ধরে ওই পাম্পগুলি ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় পাম্পগুলি অকেজো হয়ে গিয়েছে। ফলে ফি-বর্ষায় শহর জলে ভাসলেও পুরসভার কিছু করার থাকে না।
এ জন্যই পুরসভার দাবি মতো রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ওই পাম্প সারাইয়ের জন্য সম্প্রতি ৭০ লক্ষ বরাদ্দ করেছে। যদিও সেগুলি সারাইয়ের কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় চলতি বর্ষায় পাম্পগুলি সারানো হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফলে উত্তর, মধ্য হাওড়া-সহ শহরের পূর্ব দিকে যে অঞ্চলগুলি ফি-বছর জলে ভাসে এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশঙ্কা।