খাতায়-কলমে কচিকাঁচা পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০। কিন্তু কেউই আসে না।
পুষ্টিকর খাবার না মেলায় আসেন না গর্ভবতী মহিলারাও।
সহায়িকা না থাকায় বাগনান-১ ব্লকের কল্যাণপুর-সিঁদরিপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এই অচলাবস্থা চলছে প্রায় দু’বছর ধরে। অবশ্য শুধু ওই কেন্দ্রেই নয়, সহায়িকা বা কর্মী না থাকায় হাওড়া জেলায় ৪৫৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বহু শিশু এবং গর্ভবতী মহিলা। ২০০৯ সাল থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার জন্যই এই সমস্যা হয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন জেলা আইসিডিএস প্রকল্প আধিকারিক লিলি চট্টেপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, সমস্যা দ্রুত মেটানোর চেষ্টা চলছে।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়োগের জন্য জেলায় বিশেষ নির্বাচক কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই প্রকল্পে ১৪০০ শূন্যপদ রয়েছে। কিন্তু কেন নিয়োগ হচ্ছে না? কমিটির চেয়ারম্যান পুলক রায়ের দাবি, “কয়েক মাস আগে নিয়োগের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন এবং তার পরে বিভিন্ন প্রশাসনিক কারণে নিয়োগ সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের (আইসিডিএস) আওতায় ওই কেন্দ্রগুলিতে সদ্যোজাত থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া এবং পড়াশোনা (প্রি-প্রাইমারি) করানো হয়। একই সঙ্গে গর্ভবতী এবং সদ্য মা হয়েছেন, এমন মহিলারাও ছ’মাস পর্যন্ত নিখরচায় পুষ্টিকর খাবার পান। পালস্ পোলিও টিকাকরণেও ওই কেন্দ্রের কর্মীদের কাজে লাগানো হয়। প্রতি কেন্দ্রে এক জন করে সহায়িকা এবং কর্মী থাকেন। কিন্তু হাওড়া জেলায় মোট ৪৫০৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০৫২টির কোথাও সহায়িকা নেই, কোথাও কর্মী নেই বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
কল্যাণপুরের কেন্দ্রটি বছর পনেরো পুরনো। কর্মী শুভ্রা দত্ত জানান, ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে দু’বছর আগেও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫-৪০ জন আসত। সেই সময়ে সহায়িকা হিসেবে যিনি কাজ করতেন, তিনি অন্য কেন্দ্রে চলে যান। তার পর থেকে রান্না খাবার দেওয়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালের অগস্ট মাস থেকে পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে কেন্দ্রটি।
শুভ্রাদেবীর দাবি, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য তাদের বাবা-মাকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু খাবার না মেলায় কেউ সাড়া দেননি। আমি সারাদিন কেন্দ্রে একা কাজকর্ম করে ফিরে যাই।”
বাগনান-১ ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) স্বাতী দত্ত জানান, সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তাঁরা নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন।