পড়শির বাড়ির বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলেন এক আম ব্যবসায়ী। সেখানে চড়াও হয়ে পরপর গুলি ছুড়ে তাঁকে খুন করে পায়ে হেঁটে পালাল দুষ্কৃতীরা। রবিবার ঘটনাটি ঘটে হুগলির চুঁচুড়ার আইমাডাঙায়। নিহতের নাম তপন দে ওরফে খোকা (৫৮)। ঘটনার জেরে আতঙ্ক ছড়ায় ওই এলাকায়। তদন্ত শুরু করলেও রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের ধরতে পারেনি পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, আইমাডাঙা ১ নম্বর লেনের বাসিন্দা তপনবাবু চুঁচুড়া স্টেশন চত্বরে সাইকেল গ্যারেজ চালাতেন। সম্প্রতি তিনি বাড়ির কাছে একটি আমবাগান লিজ নেন। প্রতিদিনের মতো রবিবার সকাল থেকে বাগান দেখাশোনা করে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রতিবেশী বিমল দে’র বাড়িতে গিয়ে বসেন। সেই সময় জনা সাতেক যুবক সেখানে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, তালের রস কোথায় পাওয়া যাবে। তিনি বাগান পেরিয়ে যেতে বলেন। সেই কথা শুনে যুবকেরা সে দিকে যায়। মিনিট খানেক পরেই অবশ্য তারা ফিরে এসে স্বমূর্তি ধরে। অভিযোগ, তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। চার জন তপনবাবুর কাছে চলে আসে। বাকিরা পাহারায় দাঁড়ায়। দুষ্কৃতীদের এক জন তপনবাবুর কপালে গুলি করে। ওই অবস্থাতেই ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে তিনি। পারেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় দরজার সামনে মুখ থুবড়ে পড়েন। দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি ছুড়তে থাকে। ঘটনাস্থলেই ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রায় ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। তপনবাবুর শরীরে ১৩টি গুলি লাগে।
বিমলবাবু সেই সময় ঘরে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী রান্না করছিলেন। গুলির আওয়াজ পেয়ে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে দেখেন, তপনবাবু মাটিতে পড়ে। মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সামনের রাস্তা দিয়ে দুষ্কৃতীরা পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। গুলির আওয়াজে প্রতিবেশীরাও চলে আসেন। তপনবাবুর স্ত্রী এবং তিন ছেলেমেয়ে বাড়িতেই ছিলেন। তাঁরাও ছুটে আসেন। ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা চম্পট দিয়েছে। খবর পেয়ে চুঁচুড়া থানার আইসি সুশান্ত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। মৃতদেহ ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুষ্কৃতীদের ধরতে না পারলেও তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার বলেন, “জমি সংক্রান্ত শত্রুতার জেরেই ওই ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।” নিহতের স্ত্রী উমাদেবীর অবশ্য দাবি, “স্বামী বলতেন, ওঁর কোনও শত্রু নেই। তবে আমের ব্যবসা শুরু করার পর ইদানীং কিছু একটা চিন্তা করতেন। তবে কারও সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে বলেও শুনিনি।” তিনি বলেন, “যারা এ ভাবে আমার সংসারটা শেষ করে দিল, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়।”
বিমলবাবুর স্ত্রী রেখাদেবী বলেন, “ছেলেগুলো প্রথমে এসে তপনদার সঙ্গে কথা বলে চলে গেল। ওরাই যে ফিরে এসে এমন কাণ্ড ঘটাবে, বুঝতে পারিনি।’’ বিমলবাবু বলেন, “গুলির আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে দেখি, দুষ্কৃতীরা হেঁটে চলে যাচ্ছে। কয়েক জন রেললাইন ধরে আর বাকিরা পাড়ার রাস্তা দিয়ে। সকলের হাতেই বন্দুক ছিল। তাই কিছুই করতে পারিনি।” স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত দে বলেন, ‘‘হঠাত্ পটকা ফাটার মতো আওয়াজ পেয়ে বাইরে এসে দেখি, কয়েকটা ছেলে গুলি চালাতে চালাতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে ফের ঘরে ঢুকে পড়ি। পরে বিমলবাবুর চিত্কারে বেরিয়ে এসে দেখি ওই কাণ্ড।”