ঘোলা জলে নাজেহাল হাওড়া, অভিযুক্ত পুরসভা

বাম আমলে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসানোয় রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়েছে, এমন অভিযোগ প্রায়ই উঠেছে। কিন্তু এ বার, পুরভোটের প্রতিশ্রুতি মতো পানীয় জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসানোর অভিযোগ উঠেছে হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধেও। বর্তমানে রাজ্যের প্রধান সচিবালয় ‘নবান্ন’ও ওই অঞ্চলেই। এমন অভিযোগও উঠেছে, গভীর নলকূপের ওই জল পরিশোধন না করে সরাসরি পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পাইপলাইনে সংযোগ করে দেওয়ায় ঘোলা, দুর্গন্ধযুক্ত জল খেতে হচ্ছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৪
Share:

বাম আমলে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসানোয় রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়েছে, এমন অভিযোগ প্রায়ই উঠেছে। কিন্তু এ বার, পুরভোটের প্রতিশ্রুতি মতো পানীয় জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসানোর অভিযোগ উঠেছে হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধেও। বর্তমানে রাজ্যের প্রধান সচিবালয় ‘নবান্ন’ও ওই অঞ্চলেই। এমন অভিযোগও উঠেছে, গভীর নলকূপের ওই জল পরিশোধন না করে সরাসরি পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পাইপলাইনে সংযোগ করে দেওয়ায় ঘোলা, দুর্গন্ধযুক্ত জল খেতে হচ্ছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।

Advertisement

সম্প্রতি বিধানসভায় রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের সঙ্কটের জন্য বাম সরকারকে দায়ী করে বিবৃতি দেন রাজ্যের জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তিনি অভিযোগ করেন, বাম আমলে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি দেওয়াতেই এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কিন্তু তাঁদের আমলেই তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি পুরসভা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রীতিমতো বিব্রত খোদ রাজ্যের জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মন্ত্রী। সৌমেনবাবু বলেন, “আমাদের দফতরের অনুমতি না নেওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। এখন আর এই ভাবে গভীর নলকূপ বসানো যায় না। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

একই বক্তব্য হাওড়ার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার চম্পক ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, “হাওড়ায় জলে লোহার পরিমাণ খুবই বেশি, যা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর। গভীর নলকূপ করতে গেলে আমাদেরও রাজ্য জলসম্পদ দফতরের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হয়।”

Advertisement

হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরভোটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাওড়ার ৫০টি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহের জন্য ২৪টি জায়গায় গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় নতুন তৃণমূল পুরবোর্ড। ইতিমধ্যে ১০টি গভীর নলকূপ বসানোর কাজ শেষও হয়ে যায়। এমনকী, গভীর নলকূপ থেকে তোলা জল সরাসরি পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পাইপের সঙ্গে যোগ করে গত একমাস ধরে কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি গভীর নলকূপের জন্য খরচ হয় গড়ে ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, এই গভীর নলকূপ বসানোর জন্য রাজ্য জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের অনুমতি আবশ্যিক হলেও যেমন তা পুরসভা নেয়নি, তেমনই গভীর নলকূপের তোলা জল সরাসরি পদ্মপুকুর প্রকল্পের পাইপলাইনে যোগ করে সরবরাহ করা হলেও সেই জল যথেষ্ট স্বাস্থ্যসম্মত কি না, তা পরীক্ষা করে পর্যন্ত দেখা হয়নি। এমনকী, যে হাওড়া শহরে মাটির তলার জলে লোহার পরিমাণ বেশি, সেখানে বসানো গভীর নলকূপগুলির কোনওটাতেই আয়রন ফিল্টার ইউনিট লাগানো হয়নি। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে পানের অযোগ্য জল ব্যবহার করছেন।

হাওড়া পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবপ্রসাদ দত্ত বলেন, “জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য তড়িঘড়ি এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। এটা ঠিকই কয়েকটি এলাকায় ঘোলা জল যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় দেখছি।” পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি ছাড়া এই সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে নিলেও জল দফতরের মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “আমাদের সব দফতরের অনুমতি নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। জল পরীক্ষাও করা হয়েছে।

ওই জল খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়েছেন বলে শুনিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন