কাঠামো থেকে পুজোর ফুল

চন্দননগরে গঙ্গাদূষণ রোধে কোমর বেঁধে নেমেছে পুরসভা

আলোর রোশনাই আর থিমের লড়াইয়ে অবশেষে ইতি। বিসর্জনেক লগ্নে এ বার চন্দননগরে লড়াই শহরের দূষণের বিরুদ্ধে। রবিবার সকাল থেকেই জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন শুরু হয়েছে। মূলত দু’টি পর্যায়ে বিসর্জন হয়। একটায় শোভাযাত্রা ছাড়া, আর একটায় চোখ ধাঁধানো শোভাযাত্রায়। বাড়ির ঠাকুর এবং যে সব ঠাকুর শোভাযাত্রায় অংশ নেয় না সেইসব ঠাকুর দিনের বেলাতেই বিসর্জন পর্ব সেরে ফেলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৯
Share:

আলোর রোশনাই আর থিমের লড়াইয়ে অবশেষে ইতি। বিসর্জনেক লগ্নে এ বার চন্দননগরে লড়াই শহরের দূষণের বিরুদ্ধে।

Advertisement

রবিবার সকাল থেকেই জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন শুরু হয়েছে। মূলত দু’টি পর্যায়ে বিসর্জন হয়। একটায় শোভাযাত্রা ছাড়া, আর একটায় চোখ ধাঁধানো শোভাযাত্রায়। বাড়ির ঠাকুর এবং যে সব ঠাকুর শোভাযাত্রায় অংশ নেয় না সেইসব ঠাকুর দিনের বেলাতেই বিসর্জন পর্ব সেরে ফেলে। রাতের পর্বে থাকে চন্দননগরের ঐতিহ্যমন্ডিত পুজোগুলির বিসর্জনের শোভাযাত্রা। সেই বিসর্জন পর্ব প্রশাসনিক নজরদারিতে যতই শৃঙ্খলাবদ্ধ হোক না কেন, গঙ্গায় দূষণের মাত্রা কিন্তু তাতে কোনওভাবেই ঠেকানো যায় না। এ বার তাই গঙ্গার দূষণ রোধে সর্তক হয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে প্রশাসন।

জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগরের চারটি ঘাটে অন্তত আড়াইশো থেকে তিনশো প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এক ফলে গঙ্গার জলে দূষণের মাত্রা মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। সেই আশঙ্কা থেকেই যতটা সম্ভব দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছে চন্দননগর পুরসভা এবং এলাকার কয়েকটি দূষণ বিরোধী সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান। পুরসভার তরফে সেই কাজের নেতৃত্বে রয়েছে চন্দননগর পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান জয়ন্ত দাস।

Advertisement

বিসর্জনের ফলে গঙ্গায় যেমন প্রতিমার কাঠামো পড়ে। পাশাপাশি পুজোর নানা উপকরণ-সহ ফুল জলে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তা থেকে দূষণ ছড়ায়। এর থেকেই গঙ্গাকে বাঁচাতে রীতিমত সর্তক এ বার প্রশাসন। পুলিশ-প্রশাসন এবং নানা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে অন্তত আড়াইশো মানুষ এই কাজে নেমেছেন। চন্দননগরে রানিঘাট, গোন্দলপাড়া-সহ যে সব ঘাটে ভাসান হবে সেখানে বিশেষ জায়গা রাখা হচ্ছে। যাতে পুজোয় ব্যবহৃত ফুল, বেলপাতা-সহ নানা উপকরণ সেখানে ফেলা হয়। পুজোর উদ্যোক্তারা এর অন্যথা করলে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে।

সবুজের অভিযান নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঙ্গার দূষণ ঠেকানোর কাজে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সর্তক সজাগ দৃষ্টি থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ভাসানের কাজে এসেছেন এমন মানুষজন গঙ্গায় নানা জিনিস ফেলেন। তাঁদের বিরত করাই আমাদের কাজ।” বিসর্জনের পর প্রতিমার গা থেকে মাটি খসে গেলে তারপর সেইসব কাঠামো পাড় থেকে তুলে সরিয়ে রাখা হয়। পরে সেগুলি পুরসভার ট্রাকে চাপিয়ে সোজা চন্দননগরে পুরসভার নিজস্ব সার কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে সব দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হয়। শুধু রানিঘাট থেকে পুরসভার নিজস্ব ব্যবস্থায় অন্তত ১২ থেকে ১৪ ট্রাক প্রতিমার খড় নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক সময় আবার যাঁরা প্রতিমা গড়েন তাঁরাও কাঠামো নিয়ে যান।

জয়ন্তবাবু বলেন, “রাজ্যের মধ্যে আমার জানা একমাত্র চন্দননগরে পুরসভার নিজস্ব জৈব্য সার প্রকল্প ইউনিট আছে। কেঁচোর সাহায্যে তৈরি সেই সার আমরা বাজারে বিক্রিও করি। এর ফলে শহরে বর্জ্যের সমস্যা যেমন দূর করা সম্ভব হয়, তেমনই শহর পরিচ্ছন্নও থাকে।”

পাশাপাশি চন্দননগর শহরে পুজোর দিনগুলিতে বাড়তি গড়ে এক থেকে দেড় লক্ষ মানুষ আসেন। বিসর্জন দেখতে আরও বেশি। এই বাড়তি মানুষের চাপ বড় দূষণের কারণ। পুরসভার নিজস্ব কিছু শৌচাগার আছে। তার পরেও বাড়তি ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সব মিলিয়ে দূষণ ঠেকানো যায় না। ফলে নোংরা হয় শহর। তার উপর চিপ্‌স বা প্যাকেটজাত খাবার খেয়ে যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার কারণেও এই ক’দিন শহর বেশি নোংরা হয়। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র ইন কাউন্সিল পার্থ দত্ত বলেন, “শহরে বাড়তি মানুষের চাপে আবর্জনার পরিমাণ বাড়ে ঠিকই। জগদ্ধাত্রী ইতিহাস প্রাচীন এই শহরের ঐতিহ্য। তবে পুরসভার তরফে পুজোর দিনগুলিতে বাড়তি লোক লাগিয়ে শহর পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন