আরও বড় লক্ষ্যে।-নিজস্ব চিত্র।
মুখচোরা ছিপছিপে গরনের ছেলেটি ৪০০ মিটার দৌড়ে রাজ্যের ২৭ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
ভবিষ্যতেও আরও অনেক রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে দিতে চায় তারকেশ্বরের পূর্ব রামনগর পঞ্চায়েতের রথতলা গ্রামের ষোলো বছরের চন্দন বাউরি। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা তাকে পিছু টানে। ইতিমধ্যেই ট্র্যাকে নজরকাড়া পারফর্ম করলেও স্থানীয় প্রশাসন থেকে রাজ্য সরকার কেউ ফিরেও তাকায়নি। অবশ্য ভিন্ রাজ্য থেকে ডাক এসেছে। সেই রাজ্যের হয়ে মাঠে নামলে সরকার যাবতীয় সুবিধা দেবে।
হুগলি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা চন্দনের সম্পর্কে বিশদ জানেনই না তা বোঝা গেল সংস্থার কর্তা তথা বিধায়ক তপন মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেন। তবে ছেলেটির কথা শোনার পরে তাঁর আশ্বাস, “আমি নিজে খোঁজখবর নিচ্ছি। ওর ভবিষ্যতের জন্য যা যা দরকার আমরা নিশ্চয়ই করব। আমাদের প্রতিভা আমাদের রাজ্যেই ফুল ফোটাবে।”
তারকেশ্বরের প্রত্যন্ত গ্রামে মাটির বাড়িতে মা আর দাদার সঙ্গে থাকে চন্দন। রামনগর নূটবিহারী পালচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে সে। দাদা সন্তু হোমগার্ড। মা ঝর্নাদেবী খেতমজুর। সংসারের খরচ সামলে চন্দনের উপর বাড়তি নজর দিতে পারেন কই তাঁরা! দৌড়নোর জন্য ভাল জুতো জোটে না। পুষ্টিকর খাবার জোটে না। তবু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে চায় না চন্দন। তার লড়াইকে এগিয়ে দিতে চেষ্টার কসুর করেন না কোচ রাজদীপ কারক। জানান, কলকাতায় জাতীয় মিটে অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে নেমে ৪০০ মিটারের পাশাপাশি ২০০ মিটারেও রেকর্ড করে চন্দন। ৪০০ মিটারে তার সময় ৪৭.০৪ সেকেন্ড। এর আগের এই রেকর্ড ছিল গোলাম কিবরিয়ার পকেটে। তিনি সময় করেছিলেন ৪৮.০১ সেকেন্ড। এ বছরেই গোয়ায় ইউথ ন্যাশনালেও অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগে নজরকাড়া ফল করে চন্দন।
স্বভাবতই এ হেন রেকর্ড করে সাড়া ফেলে দিয়েছে চন্দন। ছাত্রের সাফল্যে আপ্লুত জয়দীপবাবু। সাফল্য ধরে রাখতে প্রতিদিন বিকেলে তারকেশ্বর কোচিং ক্যাম্পে কঠোর অনুশীলন থেকে শুরু করে চন্দনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। তাঁর কথায়, “ওর মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে। কিন্তু ওর পরিবারের আর্থিক অবস্থা পিছু টেনে ধরে। বড় প্রতিযোগিতায় নামতে যে ধরনের জুতো লাগে, তাও নেই ছেলেটার। সস্তার জুতো পায়েই অবশ্য বাজিমাত করছে।”
কোচের অনুযোগ, দিল্লি থেকে জিতে ফেরার পরে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনের কোনও কর্তাব্যক্তি এক বারের জন্যও খোঁজ নেয়নি ছেলেটার। সাহায্য করা তো দূরঅস্ৎ।