জল জমা রুখতে কংক্রিটের হচ্ছে জি টি রোডের ৩ কিলোমিটার অংশ

কখনও পাইপ ফেটে যাওয়ায়, কখনও বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে দুর্বিষহ অবস্থা হয় রাস্তার। জোড়াতাপ্পি দেওয়া হলেও কিছু দিন পরেই পিচ উঠে বেরিয়ে পড়ে খানাখন্দ। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ এবং যান-চালকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হুগলি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০১:৫৩
Share:

চলছে কংক্রিটের স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ। ছবি: প্রকাশ পাল।

কখনও পাইপ ফেটে যাওয়ায়, কখনও বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে দুর্বিষহ অবস্থা হয় রাস্তার। জোড়াতাপ্পি দেওয়া হলেও কিছু দিন পরেই পিচ উঠে বেরিয়ে পড়ে খানাখন্দ। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ এবং যান-চালকেরা। হুগলিতে জি টি রোডের কয়েকটি এলাকায় এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। তার সমাধান হিসেবে ওই সব এলাকায় রাস্তাটিকে কংক্রিটে মুড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ত দফতর।

Advertisement

ইতিমধ্যেই শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজার থেকে নওগাঁ বাজার পর্যন্ত জি টি রোডের ৬৫০ মিটার অংশে এবং রিষড়ার বাগখাল এলাকায় সেই কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ত দফতর জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে বৈদ্যবাটি-চৌমাথা, চাঁপদানি এবং ব্যান্ডেল এলাকাতেও ওই কাজ হবে। আরও কোনও এলাকায় রাস্তাটিকে কংক্রিটের করা প্রয়োজন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বস্তুত, পূর্ত দফতরের এই উদ্যোগ জি টি রোডের আমূল সংস্কারের মধ্যেই পড়ছে। বছর দেড়েক আগে সিঙ্গুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়ে দিল্লি রোড এবং জি টি রোডের হাল নিয়ে জেলা পূর্ত দফতরের অফিসারদের কার্যত ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই এই দুই সড়ক নিয়ে ভাবনাচিন্তা জোরদার করে সংশ্লিষ্ট দফতর। ইতিমধ্যেই হুগলিতে দিল্লি রোড চার লেনে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরপাড়া থেকে মগরা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ জি টি রোডেরও আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে জল দাঁড়িয়ে যায়, এমন তিন কিলোমিটার অংশে কংক্রিটের ঢালাই করা হচ্ছে। কিছু জায়গায় রাস্তার ধারে নর্দমাও সংস্কার করা হচ্ছে।

Advertisement

পূর্ত দফতরের দাবি, কংক্রিটের হলে রাস্তাটি অনেকটাই উঁচু হয়ে যাবে। জল দাঁড়ানোর সমস্যা থাকবে না। তা ছাড়া, কংক্রিটের ঢালাই পিচের থেকে অনেকাংশে মজবুত হওয়ায় খরচ বেশি হলেও রাস্তা টিকবে বহু দিন। উত্তরপাড়া থেকে মগরা পর্যন্ত জিটি রোড সংস্কার আগামী মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে। এ জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজার থেকে নওগাঁ বাজার পর্যন্ত জি টি রোডের অবস্থা দীর্ঘদিন বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে। গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে সারা দিনে শ’য়ে শ’য়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও শ্রীরামপুর-চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর-পাণ্ডুয়া, শ্রীরামপুর-তারকেশ্বর সহ বিভিন্ন রুটের বাস এবং ট্রেকার, অটোও চলে। কিন্তু গাড়ি চালাতে সমস্যায় পড়েন চালকেরা। মোটরবাইক বা সাইকেল আরোহীদেরও দুর্ভোগ কম হয় না। নর্দমা উপছে নোংরা জলে রাস্তা ভাসে। ওই এলাকাতেই জি টি রোডের ধারে শ্রীরামপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড তৈরি করছে এইচআরবিসি। রাস্তাটির দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মাস দুয়েক আগে শুরু হয়েছে ওই রাস্তাকে কংক্রিটে মুড়ে ফেলার কাজ। ইতিমধ্যে রাস্তাটির এক দিকের কাজ শেষ করে অন্য দিকের কাজও শুরু করেছে পূর্ত দফতর। কিন্তু শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিতে অত্যন্ত ঢিমেতালে কাজ চলায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। রথের সময়ে ওই যানজট ভয়াবহ আকার নেবে বলেও অনেকের আশঙ্কা।

পূর্ত দফতরের শ্রীরামপুর মহকুমা সহকারী বাস্তুকার সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় যানজটের কথা মেনে নিলেও ঢিমেতালে কাজের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘কংক্রিট বসানোর পরে ২৮ দিন ফেলে রাখতে হয়। সে কারণেই মনে হচ্ছে, কাজে দেরি হচ্ছে। সময়মতোই কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে।” তবে, রথের সময় যাতে রাস্তার অবস্থা যতটা সম্ভব চলনসই করার চেষ্টা চলছে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন সন্দীপবাবু। প্রবল বৃষ্টি না হলে নতুন কংক্রিটের রাস্তাটিতে আগামী এক মাসের মধ্যেই পুরোদমে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলাচল শুরু হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার সাইট সুপারভাইজার মিলন পণ্ডিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন