পুরভোটের মুখে শ্রীরামপুরে কংগ্রেসের ঘর ভাঙতে শুরু করল শাসক দল তৃণমূল। নির্বিঘ্নে ভোটের বৈতরণী পেরনোর পাশাপাশি হুগলি জেলা কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানকে শক্তিহীন করতেই তৃণমূল নেতৃত্ব দলে ভাঙন ধরাতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ।
তৃণমূল শিবিরের দাবি, শ্রীরামপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি তথা ১৯৮১ সাল থেকে টানা সাত বারের কাউন্সিলর গিরিধারী সাহা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। দু-দু’বার উপ-পুরপ্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন জেলায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা বলে পরিচিত গিরিধারীবাবু। পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও গত পুর-নির্বাচনে শ্রীরামপুরে কংগ্রেসের প্রধান সেনাপতি ছিলেন মান্নান অনুগামী বলে পরিচিত ওই নেতা। পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর রাজেশ শা’ও দিন কয়েক আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন বৈদ্যবাটি পুরসভার কাউন্সিলর উদয়চাঁদ ঘোষও। আর এতেই উত্সাহিত হয়ে জেলার তৃণমূল নেতারা রাখঢাক না করেই জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেসের আরও কয়েক জন কাউন্সিলরের সঙ্গেও তাঁদের কথাবার্তা চলছে।
হুগলিতে কংগ্রেসের সংগঠন এমনিতেই দুর্বল। সম্প্রতি দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সেই দুর্বলতা আরও প্রকট করেছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের নেতাদের এমন দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি মান্নান। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক কংগ্রেস নেতার কথায়, এলাকায় গিরিধারীবাবুর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। উনি চলে গেলে তার কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই।” দলের আর এক নেতা জানান, প্রদেশ নেতৃত্বের খামখেয়ালিপনায় নিচু স্তরের নেতা-কর্মীরা ফাঁপড়ে পড়ছেন। তাই দল ছাড়ছেন।
গত পুরভোটে শ্রীরামপুরে ২৯টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে জিতেছিল তৃণমূল। ৫টা পেয়েছিল কংগ্রেস ৭টি সিপিএম। চারটি আসন জিতেছিলেন নির্দল প্রার্থীরা। যার মধ্যে পরে দু’জন তৃণমূলে যোগ দেন। ১৫টি আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ট হিসাবে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। কিছু দিন আগে এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হওয়ায় একটি আসন কমে যায় তৃণমূলের। তার উপর, গত লোকসভা নির্বাচনে ভোটের নিরিখে শ্রীরামপুর পুর এলাকায় খারাপ ফল করে শাসক দল। ৯টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়ে তারা। ওয়ার্ডগত ফলের ভিত্তিতে বিজেপি-র প্রতি সমর্থন বেড়ে ওঠার আবহে প্রমাদ গোনেন শাসক দলের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে পুরভোটের ঢাকে কাঠি পড়তে না পড়তেই কংগ্রেসের ঘর ভাঙতে আসরে নেমে পড়েছে তারা, এমনই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।
শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গিরিধারীবাবু দক্ষ সংগঠক। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। ওঁকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা মনস্থির করেছি।” যদিও তাঁর তৃণমূলে যোগদান প্রসঙ্গে গিরিধারীবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে রবিবার দলীয় কর্মীসভার পরে তাঁর অনুগামী এক নেতার কথায়, “দাদা দলবল নিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
যদিও তৃণমূল শিবিরের দাবি, তাদের আসল ‘টার্গেট’ অবশ্য জেলার তথা রাজ্যের অন্যতম প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মান্নান। দলীয় সূত্রে খবর, যে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তৃণমূল তটস্থ, সেই ইস্যু নিয়ে হুগলি জেলা কংগ্রেস নেতা মান্নানই প্রথম থেকে কলকাঠি নাড়া শুরু করেন। সারদার বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়ার পিছনেও অন্যতম প্রধান মাথাই তিনি। এই কারণেই নিজের জেলায় মান্নানকে কোণঠাসা করার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল।
জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা জানান, মান্নানদা এখন টিভিতে মুখ দেখানো নেতা। নিজের জেলায় ওঁর সংগঠন বা জনপ্রিয়তা তলানিতে। অবশিষ্ট নেতাকর্মীরা ওঁর উপর ক্ষুণ্ণ হয়েই কংগ্রেস ছাড়তে চাইছেন।”