তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন, চ্যালেঞ্জের মুখে হাওড়া পুলিশ

শাসকেরা কখনও ‘অন্যায়’ করে না। আবার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে যা করা প্রয়োজন, তা করার ক্ষেত্রে হাত বেঁধে দেওয়া হয় পুলিশের। তার আর একটি নজির দেখা গেল হাওড়ায়। হাঙ্গামা ও মারধরের অভিযোগে হাওড়ার কয়েক জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। এর প্রতিবাদ করে মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়া পুরসভার ২৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলর দলবল নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৭
Share:

পুলিশ কমিশনারের সামনে তৃণমূল নেতারা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

শাসকেরা কখনও ‘অন্যায়’ করে না। আবার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে যা করা প্রয়োজন, তা করার ক্ষেত্রে হাত বেঁধে দেওয়া হয় পুলিশের। তার আর একটি নজির দেখা গেল হাওড়ায়।

Advertisement

হাঙ্গামা ও মারধরের অভিযোগে হাওড়ার কয়েক জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। এর প্রতিবাদ করে মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়া পুরসভার ২৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলর দলবল নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের দাবি, তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ওই ধারা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। ঠিক অপরাধীকে ধরলেও তৃণমূল করার জন্য তাঁকে বা তাঁদের ছেড়ে দিতে হবে কার্যত এটাই যেন এ রাজ্যের অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের মতে, এই কারণেই এত দিন ধরা যায়নি আরাবুল ইসলামকে। ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি অনুব্রত মণ্ডল বা তাপস পালের বিরুদ্ধে। আবার ব্যবস্থা নিলেও সেই ‘অপরাধে’ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে খোদ পুলিশকর্তাকেই। যেমন হয়েছিল পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দার ক্ষেত্রে। গার্ডেনরিচের মুন্না ইকবালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় তাঁকে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকেই সরে যেতে হয়েছিল। আবার আলিপুর থানায় হামলাকারী তৃণমূলের লোকজনকে যাতে ধরতে না হয়, তার জন্য পুলিশকে অন্য লোক ধরতে হয়।

Advertisement

চাইলেও পুলিশ যে কাজ করতে পারে না, তার একটি ছোট উদাহরণ হাওড়ার এই ঘটনা। গত রবিবার সন্ধ্যায় সালকিয়ার বাঁধাঘাট মোড়ে যখন বিজেপি-র একটি সভা চলছিল তখন একটি বোতল বোমা এসে পড়ে। দু’জন গুরুতর জখম হন। দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিজেপি-র অভিযোগ, সভার দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল করে এসে তৃণমূল-সমর্থকেরা তাদের সভা বানচাল করার চেষ্টা চালায়। রিকশায় মাইক বেঁধে বক্তৃতা দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বোমা মারে। পুলিশ জানায়, ওই দিন রাতেই গোলাবাড়ি থানার সামনে দু’পক্ষের মারামারি হয়। তাতে তৃণমূলেরও দু’জন আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়।

এই ঘটনার পরে দু’পক্ষই মালিপাঁচঘরা ও গোলাবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ সূত্রের খবর, বিজেপি-র পক্ষ থেকে মালিপাঁচঘরা থানায় উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী-সহ আরও কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণের অভিযোগ দায়ের করে। মূলত বিজেপি-র করা এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও রাস্তায় পুলিশের লাগানো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় তোলা ছবি ও প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩২৬ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ সূত্রে খবর, এর মধ্যে ৩২৬ ধারা জামিন-অযোগ্য।

প্রশ্ন হল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেই পুলিশকে রাজনৈতিক চাপে পড়তে হচ্ছে কেন? জেলার তৃণমূল সভাপতি তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সব সময়ে বলছেন, পুলিশকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দিতে হবে। পুলিশকেও সংযত হয়ে কাজ করতে হবে। তবে বিজেপি যে ভাবে তৃণমূল কর্মীদের মারধর করেছে, তাতে ওদেরই আগে ধরা উচিত।”

হাওড়ার তৃণমূল কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র বলেন, “বিজেপি বহিরাগত এনে হাওড়াকে অশান্ত করতে চাইছে। রবিবারের গোলমাল বিজেপি করলেও আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনারকে আমরা মামলাটি তুলে নিয়ে নতুন করে তদন্ত করার জন্য বলেছি।”

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “এ বিষয়ে কিছু বলব না। তবে ওঁরা পুলিশের দায়ের করা মামলা নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন।” তৃণমূল কাউন্সিলরদের এই দাবির জেরে পুলিশ কমিশনার যে চাপে, তা বলাই বাহুল্য। সেই চাপ কাটিয়ে ওই নেতাদের আদৌ গ্রেফতার করা হবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, তৃণমূল কাউন্সিলরদের এই দাবি প্রাথমিক ভাবে মেনে না নিলেও ওই নেতাদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন