ইগলুর আদলে মণ্ডপ ক্ষুদিরায়তলায়।
দুর্গার বিসর্জনের রেশ মেলাতে না মেলাতেই লক্ষ্মীর হাত ধরে রকমারি থিমের জোয়ারে ভাসল হাওড়ার খালনা। ইতিহাস থেকে বর্তমান সমাজজীবন, ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতার মেলবন্ধন ফুটে উঠছে মণ্ডপগুলিতে।
ক্ষুদিরায়তলার এ বারের থিম এস্কিমোদের জীবনযাত্রা। এস্কিমোদের বাড়ি ‘ইগলু’র আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। এস্কিমোদের শিকার ধরা থেকে তাঁদের রোজনামচার নানা ছবি তুলে আনা হয়েছে মডেলের মাধ্যমে। রয়েছে পেঙ্গুইনের মডেল। কয়লাখনির শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবন পুজোর ভাবনায় তুলে এনেছে মিতালি সঙ্ঘ। এখানে এলে খনির ভিতরে শ্রমিকেরা কী ভাবে কাজ করেন তা চাক্ষুষ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। খালনা পশ্চিমপাড়া আমরা সবাই ক্লাব তাদের পুজো মণ্ডপে তুলে এনেছে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন ঐতিহ্যপূর্ণ জিনিস। পশ্চিমপাড়া রাজবংশীপাড়া বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজোর উদ্যোক্তারা মণ্ডপ তৈরি করেছেন অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে। আমরা সবাই ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বিষ্ণুপুরের মন্দিরের আদলে।
ঝাড়খণ্ডের রাজবাড়ির ফটকের আদলে তৈরি হয়েছে কৃষ্ণরায়তলার মণ্ডপ। তার ভিতরে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর যুগে লক্ষ্মীর আরাধনার চিত্র। একতা ক্লাবের মণ্ডপে ধানের গোলার আদল। এ ছাড়া, আমরা সকল ক্লাব, সিংহবাহিনীতলা, বাদামতলা, ঘোষপাড়া চারুময়ী ক্লাবের পুজোতেও জাঁকজমক, জৌলুসের অভাব নেই। মণ্ডপে মণ্ডপে চোখধাঁধানো আলো। মণ্ডপের চারপাশে রীতিমতো মেলা বসে গিয়েছে। পুজো উপলক্ষে কর্মক্ষেত্রে বাইরে থাকা গ্রামবাসী ঘরে ফিরে এসেছেন।
মণ্ডপের পথে ধনদেবী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দুর্গাপুজো নয়, লক্ষ্মীপুজোতেই এখানকার মানুষ শারদোৎসবে মেতে ওঠেন। খালনার লক্ষীপুজো কয়েকশো বছরের পুরনো। কথিত আছে, দুর্গাপুজোর সময় এই এলাকা বন্যায় প্লাবিত হত। তাই দুর্গাপুজো নয়, লক্ষ্মীপুজোই এখানকার মানুষের প্রধান উৎসব। তবে অন্য মতও আছে। স্থানীয় বহু প্রবীণের মতে, ব্যবসায় উন্নতির জন্য এখানকার ব্যবসায়ীরা ধনদেবীর পুজোর প্রচলন করেছিলেন।
স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, “এখানকার লক্ষ্মীপুজোর ঐতিহ্য রয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে তা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।”
খালনা পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও এখানকার পুজোর উদ্যোক্তারা নিজেদের চেষ্টায় সাধ্যমতো আয়োজন করেন।”
ছবি: সুব্রত জানা।