শুভশ্রী মালিক
সাইকেল থেকে পড়ে ম্যাটাডরের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক শিশুর। বিকেলে আবার খেলতে বেরিয়ে বাড়ির সামনেই লরিতে পিষ্ট হল ছয় বছরের এক বালক। বুধবার এমনই দু’টি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল হাওড়া। প্রথম ঘটনাটি ঘটে জগদীশপুরে। পরের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে টিকিয়াপাড়ায়।
পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, লক্ষ্মণপুর বাগপাড়ার বাসিন্দা পেশায় জনমজুর বুদ্ধদেব মালিকের তিন বছরের মেয়ে শুভশ্রী ডোমজুড়-জগদীশপুর রোডের উপরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের আপার নার্সারির ছাত্রী। রোজ সকাল সাতটা নাগাদ বাবার সঙ্গে সাইকেলে করে দেড় কিলোমিটার
দূরের স্কুলে যেত শুভশ্রী। আর ১০টা নাগাদ স্কুল ছুটির পরে মা অনুরাধার সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরত শিশুটি। এ দিন মায়ের সঙ্গে ফেরার পথেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, স্কুল থেকে বেরিয়ে মায়ের কাছে মুগডাল ভাজা খাওয়ার আবদার করেছিল শিশুটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, স্কুলের কাছেই রাস্তার ধারে সাইকেল দাঁড় করিয়ে দোকানে ঢোকেন অনুরাধা। কেরিয়ারেই বসেছিল শুভশ্রী। তখনই ডোমজুড়ের দিক থেকে একটি ম্যাটাডর আসছিল। রাস্তার ধারে সাইকেলে শিশুটিকে দেখে জোরে হর্ন দেয় ম্যাটাডরটির চালক। সম্ভবত তাতে ভয় পেয়ে নড়াচড়া করায় সাইকেল-সহ উল্টে পড়ে শুভশ্রী। এর পরেই ম্যাটাডরের চাকায় ধাক্কা লাগে তার। স্থানীয়েরা হইচই করে ছুটে গেলে ম্যাটাডর ফেলে চম্পট দেয় চালক। পুলিশ জানায়, চিকিত্সকের কাছে নিয়ে গেলে শুভশ্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
লরির ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু টিকিয়াপাড়ায়, পথ অবরোধ।
এ দিন লক্ষ্মণপুরে বাগপাড়ায় ঢুকতেই দেখা যায় প্রতি মোড়ে জটলা। সেখানে টালির চালের ছোট্ট বাড়ি শুভশ্রীদের। বাড়ির সামনে প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের ভিড়। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে অনুরাধা বলেন, ‘‘স্কুল থেকে আর বাড়ি আনতে পারলাম না মেয়েটাকে।’’
এ দিনই বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ টিকিয়াপাড়ায় ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস রোডের ধারে ঘটে আর একটি শিশুমৃত্যুর ঘটনা। পুলিশ জানায়, রাস্তার এক পাশে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল স্থানীয় ঝুপড়ির বাসিন্দা ছয় বছরের মহম্মদ ইতরিয়াজ। আচমকাই একটি লরির পিছনের অংশে ধাক্কা লাগে তার। লরি এবং একটি দেওয়ালের মাঝে পিষ্ট হয় সে। লরি ফেলে চম্পট দেয় চালক। হাসপাতালে ইতরিয়াজকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনার পরে আধ ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন স্থানীয়েরা।
এ দিকে, একই দিনে মর্মান্তিক দু’টি শিশুমৃত্যু মনে করিয়ে দিল মাসখানেক আগে লিলুয়ায় আর এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা। বাবার সাইকেল থেকে পড়ে লরিতে পিষ্ট হয়েছিল আড়াই বছরের শিশু পলাশ। অল্প দিনের ব্যবধানে ফের এমন ঘটায় প্রশ্ন উঠছে অভিভাবকদের সচেতনতা নিয়েও।