দেদার বিকোচ্ছে শব্দবাজি, পুলিশি নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন

ঢক্কানিনাদই সার। শব্দবাজির বিক্রি আটকানো গেল না। কালীপুজোর আগে থেকেই তাই হুগলি জেলার আনাচে-কানাচে হাতে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে চকোলেট বোমা। আজ, কাল, পরশু সেগুলো কি পরিমাণে ফাটবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু প্রথম রাউন্ডে কার্যত ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩০
Share:

আড়ালে অবাধেই মিলছে শব্দবাজি।—নিজস্ব চিত্র।

ঢক্কানিনাদই সার। শব্দবাজির বিক্রি আটকানো গেল না। কালীপুজোর আগে থেকেই তাই হুগলি জেলার আনাচে-কানাচে হাতে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে চকোলেট বোমা। আজ, কাল, পরশু সেগুলো কি পরিমাণে ফাটবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু প্রথম রাউন্ডে কার্যত ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

হুগলির চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া, পাণ্ডুয়া, হরিপাল, ধনেখালি-সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘরে ঘরে বাজি তৈরি হয়। অভিযোগ, আতসবাজির আড়ালে প্রচুর পরিমাণে শব্দবাজিও তৈরি হয় এ সব এলাকায়। প্রতিবার কালীপুজোর আগে শব্দবাজি তৈরি বা বিক্রি রুখতে অভিযান চলে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, কোনও বারেই সেই ভাবে সফল হয়নি প্রশাসন। এ বারেও বিভিন্ন বাজি তৈরির জায়গায় গেলে চুপিসাড়ে কারবারির সঙ্গে কথা বললেই মিলেছে চকোলেট বোমা থেকে কালিপটকা। সে সব শব্দবাজি ছড়িয়ে পড়েছে দোকানে-দোকানে। উত্তরপাড়া থেকে শেওড়াফুলি, ত্রিবেণি থেকে জিরাট, তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ বা খানাকুল থেকে গোঘাটসর্বত্রই একই চিত্র।

জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য বলেন, “শব্দবাজি আটকাতে পুলিশ সজাগ। বিভিন্ন থানা অভিযান চালিয়ে শব্দবাজি আটক করেছে। শব্দবাজি যাতে না ফাটে, তা নিশ্চিত করতে পুজোর দিনেও অভিযান চলবে। কোনও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

চণ্ডীতলায় বেগমপুর, কলাছড়া প্রভৃতি এলাকায় বাজি তৈরি হয়। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বার বেগমপুর পঞ্চায়েতের ছোট তাজপুর নাথপাড়া, কাপাসহাড়িয়া পঞ্চায়েতের তিষা ২০ নম্বর রেলগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েক টন বাজি উদ্ধার করা হয়। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ চুনোপুটিদের ঘরে অভিযান চালায়। রাঘববোয়ালদের গুদামে কোনও তল্লাশি হয় না। চণ্ডীতলা ২ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তা বলেন, “বেগমপুর, কাপাসহাড়িয়ার কয়েকটি বাড়িতে প্রচুর বাজি মজুত থাকে। এই সব বড় ব্যবসায়ীদের পুলিশ ধরে না। কেন ধরে না, সেটাই প্রশ্ন।”

পঞ্চায়েত সমিতির ওই কর্তার কথায় যে সারবত্তা রয়েছে, গত বারেই তার প্রমাণ মিলেছিল। গত বছর কালীপুজোর আগে বেগমপুরের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। তাতে শিশু-সহ একাধিক জনের মৃত্যু হয়। তার পরে তত্‌কালীন মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) জয়সি দাশগুপ্ত সেখানে হানা দেন। চারতলা একটি বাড়ি থেকে প্রচুর বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

শ্রীরামপুরের খাসবাগানে ঘিঞ্জি এলাকায় বাড়ির দোতলায় রীতিমতো বাজির কারখানা তৈরি করে ফেলেছিলেন এক ব্যক্তি। দিন কয়েক আগে পুলিশ সেখান থেকে প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার করে। শেওড়াফুলি হাট থেকেও ৫০ কিলোগ্রাম বাজি উদ্ধার করা হয়। আরামবাগেও শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেলা সদর চুঁচুড়ায় এ বার বাজি বেচাকেনা খুবই কম।

সাধারণ মানুষের বক্তব্য, যে পরিমাণ বাজি আটক হয়েছে, তা খুবই সামান্য। পুলিশের একাংশও তা মানছেন। ফলে শব্দদানবের হাত থেকে এ বারের দীপাবলিতেও মুক্তি মিলবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন