দিচ্ছিলেন রাত পাহারা। অন্ধকারে খুটখাট আওয়াজ শুনে এগিয়ে দেখতে যান কী হচ্ছে। বদলে দুষ্কৃতীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল এক সিভিক স্বেচ্ছাসেবককে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে তারকেশ্বরের কেশবচক পঞ্চায়েতের কাঁড়ারিয়ায়। কেশব হাটি নামে ওই সিভিক স্বেচ্ছাসেবক কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কেউ অবশ্য ধরা পড়েনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে কাঁড়ারিয়ার মোকাম এলাকায় ‘ডিউটি’ করছিলেন কেশব-সহ তিন সিভিক স্বেচ্ছাসেবক। রাত দেড়টা নাগাদ ৩-৪টি মোটর সাইকেলে চেপে কয়েক জন দুষ্কৃতী এলাকায় আসে। পুলিশ জানায়, অন্ধকারে একটি গলির ভিতরে সোনার দোকানের শাটার ভাঙার তোড়জোড় করছিল দুষ্কৃতীরা। তাদের আনাগোনা টের পেয়ে কেশব এবং তাঁর সতীর্থ রামপ্রসাদ সিংহ বাঁশি বাজাতে বাজাতে সে দিকে এগিয়ে যান। অন্য জন ছিলেন কিছুটা দূরে। দুই যুবককে এগিয়ে আসতে দেখে দুষ্কৃতীরা একটি আলুর গুদামের পাশে লুকিয়ে পড়ে। অভিযোগ, কেশব এবং রামপ্রসাদ সেখানে যেতেই দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রামপ্রসাদকে শাবল দিয়ে মারা হয়। তিনি কোনওক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে ভূমিচপাড়ায় চলে যান। কেশবকে দুষ্কৃতীরা বাঁশ, লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে। মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে তাঁর। ওই অবস্থাতেই তিনি কোনওক্রমে ভূমিচপাড়ায় চলে যান। দুষ্কৃতীরা গা-ঢাকা দেয়।
রামপ্রসাদের চিত্কারে লোকজন বেরিয়ে পড়ে। থানায় খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন তারকেশ্বর থানার ওসি পার্থসারথি পাল। পুলিশই কেশবকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁর মাথায় ৮টি এবং হাতে একটি সেলাই পড়ে। ভোরে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফের তাঁকে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, কর্মরত অবস্থায় দুষ্কৃতীদের হাতে জখম হয়েছেন ওই যুবক। তারকেশ্বর থানার তরফেই চিকিত্সার যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। বাসিন্দাদের বক্তব্য, সোনার দোকান লুঠ করতে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু হইচই হওয়ায় তারা ‘অপারেশন’ না চালিয়েই চম্পট দেয়। ফের যে তারা হামলা চালাবে না কে বলতে পারে। স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে স্থানীয় একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে তালা ভেঙে কয়েকটি কম্পিউটার চুরি করে দুষ্কৃতীরা। কয়েক মাস আগে এলাকার একটি বাড়িতেও লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। এ দিনের ঘটনা নিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
কেশব এমএ পাশ। পরিবারের লোকের জানান, ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসার তোড়জোড় করছে সে। বাবা সামান্য চাষবাস করেন। ভাই বিএসসি পড়ুয়া। দরিদ্র পরিবার। এই অবস্থায় বছর খানেক ধরে সিভিক স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছিলেন কেশব। টিউশনিও করেন। তাঁর ভাই সৌম্য বলেন, “ভোরে যখন পুলিশ বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেল, দাদা তখন খুবই অসুস্থ। পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় পুলিশকে জানালে তারাই দাদাকে কলকাতায় নিয়ে যায়।”
পুলিশ সূত্রের খবর, স্বেচ্ছাসেবকদের সম্বল বলতে একটি লাঠি এবং মুখে বাঁশি। তার উপর কার্যত বিনা প্রশিক্ষণেই তাঁদের কাজ করতে হয়। পারিশ্রমিকও নিয়মিত মেলে না। অথচ জেলার বিভিন্ন থানাতেই তাঁদের দিয়ে দিব্যি রাতে ‘ডিউটি’ করানো হয়। ফলে আচমকা দুষ্কৃতীদের মুখোমুখি হয়ে পড়লে, তাঁদের পক্ষে যে সব সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, এ দিনের ঘটনাই তার প্রমাণ। জেলার এক পুলিশকর্তার অবশ্য বক্তব্য, সিভিক স্বেচ্ছাসেবকদের বলা আছে, বিশেষ করে রাতের বেলায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা দেখলে ঝুঁকি না নিয়ে থানায় ফোন করতে।