নেই স্থায়ী হাকিম, মামলার পাহাড় এসডিও কোর্টে

প্রায় আড়াই বছর আগে এক প্রতিবেশীর করা ১৪৪ ধারার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিলেন হাওড়ার দিলীপ মাল। তার পর থেকে শুধু দীর্ঘ ব্যবধানে শুনানির তারিখ পড়েছে। কিন্তু কোনও শুনানি হয়নি। ফলে আড়াই বছর ধরে আদালতে এসে ক্রমাগত তারিখ অনুযায়ী হাজিরা দিয়ে চলেছেন দিলীপবাবু। একই অবস্থা সমীর বারিকের। প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে তাঁর করা ১০৭ ধারার মামলার শুনানি হয়নি গত দু’বছর ধরে। ফলে তাঁকেও শুনানির তারিখ অনুযায়ী গত দু’বছর সমানে আদালতে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। মামলার মীমাংসা তো দূর অস্ত।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share:

প্রায় আড়াই বছর আগে এক প্রতিবেশীর করা ১৪৪ ধারার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিলেন হাওড়ার দিলীপ মাল। তার পর থেকে শুধু দীর্ঘ ব্যবধানে শুনানির তারিখ পড়েছে। কিন্তু কোনও শুনানি হয়নি। ফলে আড়াই বছর ধরে আদালতে এসে ক্রমাগত তারিখ অনুযায়ী হাজিরা দিয়ে চলেছেন দিলীপবাবু।

Advertisement

একই অবস্থা সমীর বারিকের। প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে তাঁর করা ১০৭ ধারার মামলার শুনানি হয়নি গত দু’বছর ধরে। ফলে তাঁকেও শুনানির তারিখ অনুযায়ী গত দু’বছর সমানে আদালতে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। মামলার মীমাংসা তো দূর অস্ত।

ঘটনাস্থল হাওড়ার মহকুমা শাসকের কোর্ট বা এসডিও কোর্ট। অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে এসডিও কোর্টে কোন স্থায়ী ম্যাজিস্ট্রেট বা হাকিম না থাকায় বিচার চাইতে এসে নাজেহাল হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। শুনানির জন্য নির্ধারিত দিনে হাকিম আসার কথা থাকলেও তিনি না আসতে পারায় ঝুলে রয়েছে প্রায় ৩০০টি মামলা। এ নিয়ে ক্ষোভ জমেছে হাওড়া আদালতের আইনজীবী মহলেও।

Advertisement

হাওড়া ক্রিমিনাল কোর্ট বার লাইব্রেরির সভাপতি সমীর বসু রায়চৌধুরী বলেন, “নিয়মিত হাকিম না বসায় ওই কোর্টে ২০১২ থেকে বহু মামলার শুনানি হয়নি। এ ব্যাপারে জেলাপ্রশাসনকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।”

হাওড়া আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এসডিও কোর্টে মূলত ১৪৪ ধারা (বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া) ও ১০৭ ধারার (গোলমাল না করতে দেওয়া) বিচার হয়। দু’টি ধারাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আইন হওয়ায় সাধারণ মানুষ ছোটখাটো গোলমাল এড়াতে আইনজীবীর সাহায্যে এই দু’টি ধারার আশ্রয় নেয়। ফলে এই আদালতের গুরুত্ব স্বাভাবিক ভাবেই যথেষ্ট বেশি।

আইনজীবীদের বক্তব্য, ওই কোর্টে স্থায়ী হাকিম না থাকায় যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি আদালতে সরকারি কর্মীর সংখ্যা কম থাকাতেও সমস্যা জটিল হয়েছে। মামলার কাগজপত্র জমা রাখার লোক মিলছে না। মামলার শুনানি না হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা উচ্চ আদালতে যেতে পারছেন না। এর পাশাপাশি, রায়ের প্রতিলিপি দেওয়ার মতো লোক ও যন্ত্র না থাকায় সহজে মামলার রায়ের কপিও মিলছে না। ফলে রায়ের বিরুদ্ধে কারওর অন্য আদালতে মামলা করার থাকলেও করতে পারছেন না।

আইনজীবীদের অভিযোগ, অন্য কোর্ট যখন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত হয়, তখন এই আদালত শুরু হয় দুপুর দেড়টা থেকে, চলে আড়াইটে পর্যন্ত। আইনজীবীদের প্রশ্ন, এই এক ঘণ্টায় ক’টা মামলারই বা শুনানি হতে পারে?

অস্থায়ী হাকিম ও কর্মীর অভাব যে ওই কোর্টে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন হাওড়ার মহকুমাশাসক বাণীব্রত দাসও। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “এটা ঠিকই, স্থায়ী হাকিম না দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। আসলে হাওড়ায় কয়েক বছরের মধ্যে তিনটি নির্বাচন হওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে, এবং নির্বাচনের সময়ে বিভিন্ন অফিসার বিভিন্ন জায়গায় চলে গিয়েছেন।”

মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, এ বিষয়টি রাজ্য সরকার আগে থেকেই জানে। খুব শীঘ্রই স্থায়ী হাকিমের ব্যবস্থা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement