নিষেধ, তবু বাজারে অবাধে বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ

ছোট ইলিশ হাতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে আবেদন, ছোট ইলিশ না ধরার জন্য। কয়েক দিন আগেই সংবাদমাধ্যমে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হলেও ছোট ইলিশ নিধন থামছে না। হাওড়া জেলার বিভিন্ন বাজারে অবাধে ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিকোচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে। অথচ, ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ধরা বা বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আর এই বিক্রি নিয়ে জেলা মৎস্য দফতর এবং পুলিশের মধ্যে চাপান-উতোরও চলছে।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫২
Share:

ছোট ইলিশ হাতে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে আবেদন, ছোট ইলিশ না ধরার জন্য।

Advertisement

কয়েক দিন আগেই সংবাদমাধ্যমে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হলেও ছোট ইলিশ নিধন থামছে না। হাওড়া জেলার বিভিন্ন বাজারে অবাধে ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিকোচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে। অথচ, ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ধরা বা বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আর এই বিক্রি নিয়ে জেলা মৎস্য দফতর এবং পুলিশের মধ্যে চাপান-উতোরও চলছে।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকায় বাজারে গেলে দেখা যাবে ছোট ইলিশ ঝুড়িতে সাজিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। মৎস্য দফতর বহু বছর আগেই ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে। কারণ হিসেবে দফতরের আধিকারিকেরা জানান, সমুদ্র থেকে নদীর জলে ইলিশ বর্ষাকালে ডিম পাড়তে আসে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার পরে সেগুলি কয়েক মাসের মধ্যেই বেড়ে গিয়ে ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের হয়। ছোট অবস্থায় তারা সমুদ্রে ফিরতে পারে না। নদীতেই থাকে। ডিম পাড়তে আসা বড় ইলিশ ধরা পড়লে কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু ছোট ইলিশ ধরা হলে ইলিশের সংখ্যা কমতে বাধ্য। তাই ছোট ইলিশ ধরা বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ।

Advertisement

উলুবেড়িয়ার নিমদিঘিতে মুম্বই রোডের ধারে প্রতিদিন বাজার বসে। এখানে ২০০-২৫০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। এক বিক্রেতার কথায়, “এই সব মাছ এসেছে দিঘা ও শঙ্করপুর থেকে। বাগনানের মাছের আড়ত থেকে সেই মাছ আমরা পাইকারি কিনে এনে বিক্রি করছি। ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে বড় মাছ অনেকেই কিনতে পারেন না। চাহিদা রয়েছে ছোট মাছের।” উলুবেড়িয়ারই ১১ ফটকে গঙ্গার ধারেই বসে মাছের বাজার। এখানেও দেখা মেলে ৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের। এখানে যেমন শঙ্করপুর থেকে মাছ আসে, তেমনই স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও সরাসরি গঙ্গা থেকে ছোট ইলিশ ধরে বিক্রি করেন।

ওই বাজার থেকে কিছুটা দূরে জগন্নাথপুর জেলেপাড়া। এখানে রয়েছেন অন্তত দেড়শো মৎস্যজীবী পরিবারের বাস। অনেকেই নদী-সমুদ্রে ইলিশ ধরেন। ছোট ইলিশ ধরা নিষেধ জেনেও কেন তাঁরা ধরেন? এক মৎস্যজীবী বলেন, “বড় মাছ এখন অনেক কমে গিয়েছে। সংসার চালাতে ছোট মাছই ধরতে হয়। তা ছাড়া মোহনাতেই তো ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট ইলিশ ধরা হচ্ছে। সেখান থেকে ছিটকে কিছু মাছ এখানে চলে আসছে। আসল জায়গায় তো কেউ বাধা দিচ্ছে না!” জগন্নাথপুরের দুই মৎস্যজীবীও বলেন, ‘‘এমনিতেই মাছের সংখ্যা কমেছে। তার উপরে যদি এই কাজও বন্ধ করে দিতে হয় তা হলে তো সংসার চালানোই কঠিন হবে।’’

জেলা মৎস্য দফতরের দাবি, উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর প্রভৃতি যে সব এলাকার মৎস্যজীবীরা ইলিশ ধরার সঙ্গে যুক্ত, ছোট ইলিস না ধরার জন্য তাঁদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। প্রচার চলে মাছের আড়তে বা খোলা বাজারেও। এতে পুলিশকেও সক্রিয় হতে হবে। আড়তে বা বাজারে হানা দিয়ে ছোট ইলিশ যাঁরা বিক্রি করেন, তাঁদের জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা করলে অনেক কাজ হবে। জেলা মৎস্য আধিকারিক শিবশঙ্কর বসু বলেন, “ইলিশ যাঁরা ধরেন তাঁদের বিকল্প জীবিকা যথা ছাগল চাষ বা অন্যান্য কিছুর ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই প্রস্তাব আমরা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি।”

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের কর্তারা ছোট ইলিশের রমরমার জন্য দায়ী করেছেন মৎস্য দফতরকেই। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে ছোট মাছ বিক্রির কোনও অভিযোগই দায়ের করা হয় না। এই ধরনের অভিযোগ হলে পুলিশ ওই দফতরের লোকজনকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালাতে পারে।”

পুলিশ ও মৎস্য দফতরের এই চাপান-উতোরের মধ্যেই চলেছে ছোট ইলিশ নিধন ও বিক্রি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন