এই জায়গাতেই জলাধার তৈরির কথা ছিল।—নিজস্ব চিত্র।
জমি জোগাড় নিশ্চিত হয়নি, তাই নাগরিক পরিষেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পও কার্যত বিশ বাঁও জলে!
ঘটনাস্থল বালি পুরসভা। পানীয় জলের ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য এক বছরেও নিজেদের জমি থেকে দখলদার মুক্ত করতে পারেনি সিপিএম পরিচালিত এই পুরসভা। ফলে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য কয়েক কোটি টাকার টেন্ডারই শেষমেশ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিল কেএমডিএ।
টেন্ডার বাতিলের বিষয়ে কয়েক দিন আগেই কেএমডিএ বালির পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ কোনও উত্তরই দেননি বলে অভিযোগ কেএমডিএ-র। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ওই পুরসভার চেয়ারম্যান আমার কাছে সুবিধা-অসুবিধার কথা বলেননি। সহযোগিতা চাওয়া হলে নিশ্চয় করতাম। তবে প্রয়োজনে কেএমডিএ নিজে দায়িত্ব নিয়ে ওই ট্যাঙ্ক তৈরির কাজ শেষ করবে।” যদিও পুর কর্মীরা জায়গা না ছাড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠি দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
বালি পুরসভা সূত্রের খবর, ২৪ ঘণ্টা জল সরবরাহের জন্য এক বছর আগে ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু করে কেএমডিএ। বেলুড়ে গঙ্গার ধারে জলপ্রকল্পটি তৈরির পাশাপাশি ৩৫টি ওয়ার্ডের জন্য ১২টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো বালি, বেলুড়, লিলুয়া মিলিয়ে ১১টি জায়গায় ট্যাঙ্ক তৈরি হলেও শেষ কাজটি করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে জট।
পুরসভা সূত্রের খবর, তিন নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর পদ্মবাবু রোডে বালি পুরসভারই নিজস্ব ১০ কাঠা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৭ কাঠা জমিতে ওই ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেএমডিএ। এই প্রকল্পটি তৈরি হলে ১ থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে পানীয় জল দেওয়া যাবে। এর জন্য ইতিমধ্যেই তিন কোটি টাকার পাইপ বসে গিয়েছে। বালি পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ট্যাঙ্ক তৈরি না হলে সাতটি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জল দেওয়া যাবে না।
পুরসভার এক কর্তা জানান, ওই জমিতে পুরসভার প্রায় ১৫ জন সাফাইকর্মীর ঘর রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত ও বহিরাগত মিলিয়ে আরও ১০-১২টি পরিবারের বাস। বহু আগে পুরসভাই ওই সাফাইকর্মীদের ওখানে থাকতে দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বেলুড় খামারপাড়ায় সাফাইকর্মীদের জন্য আবাসন বানানো হয়েছে। পুরসভার এক কর্তা বলেন, “কিছু পরিবার বালি-বেলুড় দুই জায়গাতেই থাকছে। কয়েক জন উঠতে চাইছেন না।” সাফাইকর্মীদের পাল্টা অভিযোগ, বেলুড়ের আবাসনের কিছু ঘর বহিরাগতেরা নিয়ে রেখেছেন। তাঁরা সেখানে যেতে রাজি নন।
বালির পুর-চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “নির্ধারিত জায়গাতেই কেএমডিএ-কে জমি দেওয়া হচ্ছে। আশা করি পরের সপ্তাহেই কাজ শুরু হবে।” যদিও কেএমডিএ-এর এক কর্তা বলেন, “কত দিন আর একটা ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য বসে থাকব? তাই টেন্ডার বাতিলের সিদ্ধান্তের চিঠি দেওয়া হয়েছে। একটা জায়গা আবার দেখিয়েছেন, দেখা যাক ওখানে কাজ হয় কি না।”