চুরির পরে ঘরে সুজাতাদেবী। বালিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ মাস আগেই বালির এক বাড়িতে চুরি করতে এসে ফ্রিজ খুলে আম-দুধ সাবাড় করেছিল চোরের দল। চুরির সময়ে এসি চালিয়ে আরামও করেছিল। তবে সোনাদানা, টাকা পয়সা নিয়ে যাওয়ার সময়ে চোরের দল ফ্রিজ বা এসি মেশিন খুলে নিয়ে যেতে পারেনি।
সেই ঘটনার কিনারা হয়নি এখনও। তার আগেই অনেকটা একই কায়দায় ফের বালির বাদামতলা এলাকায় হাত সাফাই করল চোরেরা। এ বার অবশ্য কড়াই, বাটি নিয়ে ভুরিভোজের আয়োজন করলেও শেষ মুহূর্তে রণে ভঙ্গ দিয়ে পালায় তারা। তবে যাওয়ার আগে ইন্ডাকশন ওভেন, কয়েক হাজার টাকা, শাড়ি, সোনার গয়না ও বাসনপত্র নিয়ে যায় চোরের দল। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবাক হয়ে যান তদন্তকারীরাও। তিন তলা বাড়ির প্রতিটি ঘরের তালা ভাঙা। জিনিস লণ্ডভণ্ড। বিছানার তোষক থেকে জুতোর বাক্স, টিফিন কৌটো সর্বত্রই তল্লাশি চালিয়ে তছনছ করেছে চোরের দল। আলমারিগুলি উল্টে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ইন্ডাকশন ওভেনের জায়গার পাশে পড়ে আছে কড়াই, বাটি। বাড়ি থেকে সমস্ত শাড়িও খোয়া গিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বালি বাদাম তলার ১০/১ চক্রবর্তীপাড়া লেনে তিন তলা বাড়িতে স্ত্রী সুজাতার সঙ্গে থাকেন বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রবীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রতি বছরের মতো এ বারও ষষ্ঠীর দিন সল্টলেকে এক আত্মীয়ার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন নিঃসন্তান ওই দম্পতি। সুজাতাদেবী বলেন, “বুধবার এক প্রতিবেশী জানতে চান কেন আমাদের বাড়ির তিন তলার দরজা খোলা রয়েছে। ওঁকে দেখতে বলি এক তলার কোলাপসিবল খোলা রয়েছে কি না দেখতে। তিনিই জানান ওই দরজারও তালা ভাঙা।’’
এ দিন সকালে বালিতে ফেরেন রবীন্দ্রনাথবাবুরা। ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা, বালি থানার পুলিশ এবং হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা। সদর দরজার তালা খুলে সবাই ভিতরে ঢুকে দেখেন ঘরে ঢোকার দরজার তালা ভাঙা। একতলার ঘরের খাট, বিছানা, কাঠের আলমারি থেকে শুরু করে জুতোর বাক্স, টিফিন কৌটো সমস্ত কিছুই তছনছ করেছে চোরেরা। রান্না ঘরে গ্যাস ওভেনের উপর বসানো রয়েছে বাটি। দোতলায় স্টিল আলমারি উল্টে পড়ে রয়েছে খাটের উপর। আলমারি, আলনা পুরো ফাঁকা। সুজাতাদেবীর অভিযোগ, ঘর থেকে প্রায় ১০ ভরি সোনার গয়না, ২১ হাজার টাকা, ঘড়ি, ৬০টি শাড়ি ও বাসন খোয়া গিয়েছে।
ঘটনাস্থলে আনা হয় পুলিশ কুকুরও। তবে বাড়িটি থেকে কিছুটা দূরের একটি পুকুর পর্যন্ত গিয়ে আর এগোতে পারেনি স্নিফার ডগ। গোয়েন্দারাও পায়ের ছাপ-সহ বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি সদর দরজার তালা না ভাঙায় এটা স্পষ্ট যে জিনিসপত্র বস্তায় ধরনের কিছুতে ভরে নিয়ে পাঁচিল টপকে পুকুর পাড় দিয়ে বেলুড় ধর্মতলা রোড দিয়ে পালিয়েছে চোরেরা। তদন্তে পুলিশ ওই বাড়িতে আশ্রিত এক যুবকের নাম জানতে পেরেছে, যাঁকে প্রতারণার অভিযোগে বছর খানেক আগে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবুরা। প্রতিশোধ নিতে ওই যুবক এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, প্রতি বছর পুজোর সময় বেশ কয়েক দিন ওই দম্পতি বাড়িতে থাকেন না এবং তাঁদের পাশের দু’টি বাড়ির লোকজনও পুজোর সময় থাকছেন না সেই বিষয়ে ভালো মতো ওয়াকিবহাল ছিল চোরেরা। তাই দীর্ঘ সময় ধরে তারা কুকর্মটি সারতে পেরেছে।