‘পরিচারিকা চাই’ বলে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন এক বৃদ্ধ। সেই সূত্রে এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল এক যুবতী। কিন্তু কাজের কথা নয়। দু’জনে মিলে লুঠপাটের চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধকে সঙ্গে আনা হাতুড়ির বাড়ি মেরে জখম করে তারা। বৃদ্ধের চিত্কারে স্থানীয় লোকজন যুবককে ধরে ফেললেও যুবতী পালায়। যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সোমবার দুপুরে রিষড়া থানার অদূরে একটি ছ’তলা আবাসনে এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। গৌরাঙ্গচন্দ্র দে নামে সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আবাসনের নিরাপত্তা নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন সেখানকার আবাসিকেরা।
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মনোজ সাউ। সে রিষড়ারই বাসিন্দা। জেরায় সে দাবি করেছে, সোমা নামে ওই যুবতী লুঠপাটের জন্য টাকার বিনিময়ে তাকে ভাড়া করেছিল। তদন্তকারীদের দাবি, বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলাই ঘটনার মূল চক্রী। তাকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। সে-ও রিষড়ার বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে একটি খুনের অভিযোগ রয়েছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। এর আগে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরেও দু’জনে একই ধরনের অপরাধ করেছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
এসডিপিও (শ্রীরামপুর) সুবিমল পাল বলেন, “মনে হচ্ছে, লুঠপাট চালাতেই দু’জন ওই ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল। মহিলার খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই আবাসনের নীচের দু’টি তলায় দোকান ও ডাকঘর রয়েছে। তিন তলার একটি ফ্ল্যাটে বছর দশেক ধরে গৌরাঙ্গবাবু একাই থাকেন। তাঁর পরিবারের অন্যেরা অন্যত্র থাকেন। গৌরাঙ্গবাবু সম্প্রতি খবরের কাগজে পরিচারিকার জন্য বিজ্ঞাপন দেন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মনোজ এবং ওই যুবতী গৌরাঙ্গবাবুর ফ্ল্যাটে যায়। যুবতী জানায়, সে পরিচারিকার কাজ করতে আগ্রহী। বিন্দুমাত্র সন্দেহ না করে গৌরাঙ্গবাবু ফ্ল্যাটের দরজা এবং কোলাপসিবল গেট খুলে দেন।
অভিযোগ, ফ্ল্যাটে ঢুকেই দু’জনে স্বমূর্তি ধরে। লুঠপাটের চেষ্টা করে। গৌরাঙ্গবাবু বাধা দিলে তাকে একটি হাতুড়ি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। হাতুড়ির বাড়িতে তাঁর মাথা ফাটে। রক্ত ঝরতে থাকে। কোনও রকমে ব্যালকনিতে বেরিয়ে চেঁচাতে শুরু করেন বৃদ্ধ। তাঁর চিত্কারে অন্য ফ্ল্যাটগুলির বাসিন্দা এবং আশপাশের ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবাসনের সামনের গেট দিয়ে মনোজ পালানোর চেষ্টা করছিল। তাকে ধরে ফেলা হয়। দু’চার ঘা দেয় জনতা। খবর পেয়ে রিষড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। মনোজকে গ্রেফতার করে। গৌরাঙ্গবাবুকে রিষড়া সেবাসদন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এসডিপিও নিজেও তদন্তে আসেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গৌরাঙ্গবাবুর ফ্ল্যাটের ব্যালকনির দেওয়াল থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। বিনয় ব্রহ্ম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ধরা পড়ার সময় ওই যুবক যুবতীর উপরেই দোষ চাপায়। তবে, যুবতী কোথা দিয়ে পালাল তা নিয়ে ধন্দে সকলেই। সংবাদমাধ্যমের সামনেও মনোজ দাবি করে, “আমাকে টাকার বিনিয়মে ডাকা হয়েছিল।”
এ দিনের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই আবাসনে নিরাপত্তা কার্যত নেই। ডাকঘর এবং দোকান থাকায় দিনভর বাইরের লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। রিষড়া থানার এত কাছে এই ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষ তাজ্জব। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।