বাঁকে নেই পুলিশ, মরণফাঁদ জাতীয় সড়কে

দূরত্ব বড়জোর দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার। অথচ কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের এই সামান্য অংশটুকুই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৪
Share:

পিরতলা এবং মহিষরেখা সেতুর মধ্যে সেই বিপজ্জনক বাঁক। ছবি: সুব্রত জানা।

দূরত্ব বড়জোর দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার। অথচ কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের এই সামান্য অংশটুকুই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

পুলিশের দাবি, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত উলুবেড়িয়া থানা এলাকায় পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৫টি। তার ৯০ শতাংশই এই রাস্তায় এবং তার বেশিরভাগই ঘটেছে পিরতলা থেকে মহিষরেখা সেতু পর্যন্ত অংশে। ফলে কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে এই জায়গা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়কে কুলগাছিয়ার কাছে পিরতলা থেকে দামোদরের উপরে মহিষরেখা সেতু পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার অংশে সত্তর ডিগ্রী কোণে একটি বাঁক রয়েছে। আর এই বাঁকের কারণেই জন্যই দ্রুতগতিতে চলাচলকারী যানবাহন মাঝেমধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশের একাংশ এর জন্য চালকদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, জাতীয় সড়কের এই অংশে বাঁকের জন্য চালকদের সতর্ক করতে ডিভাইডারে বা রাস্তার ধারে সতর্কবার্তা দেওয়া আছে। তাঁদের অভিযোগ, বেশিরভাগ চালকই সেদিকে নজর না দেওয়ার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে, এই অংশে যে সব গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে সেগুলির সিংহভাগই দূরবর্তী জায়গার। স্থানীয় গাড়ি নয়। ফলে রাস্তার ভৌগোলিক দিক সম্পর্কে তাঁরা জ্ঞাত না থাকাটাও দুর্ঘটনার একটা কারণ।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে, এই অংশ কতটা বিপজ্জনক। ঘটনা এক) গত ২৩ জুলাই কুলগাছিয়া-পিরতলা এলাকায় জাতীয় সড়কের পাশে জনা দশেক ব্যক্তি অটো থেকে নেমে দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তা পারাপারের জন্য। কলকাতার দিক থেকে আসা একটি ট্রেলার বাঁকের মুখে হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। ট্রেলারের নীচে চাপা পড়ে যান জনা ছয়েক। একটি বাইকও চাপা পড়ে যায়। মৃত্যু হয় বছর সাতেকের এক শিশুর। বাকিরা ভর্তি হন হাসপাতালে। এর কিছুদিন পরেই আরও একটি ট্রেলার প্রায় একই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে য়ায়। জখন হন চালক ও খালাসি। ঘটনা দুই) ১০ অগস্ট পিরতলার কাছে কাশ্যবপুরে একটি গাড়ি কলকাতার দিকে আসার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কারখানার দেওয়ালে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থেই মারা যান চালক-সহ চার আরোহী। ঘটনা তিন) মাস খানেক আগে একটি মারুতি নিয়ে কোলাঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন দু’জন। পিরতলার কাছেই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পুকুরে পড়ে যায়। মৃত্যু হয় দুজনেরই।

হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূণ মোড়ে আমরা যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রাখি। ওখানেও পুলিশ রয়েছে। প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে চালকদেরও আরও সচেতন হতে হবে।’’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রাস্তায় নিয়মিত গাড়ি নিয়ে যাতায়ত করেন এমন কয়েকজন চালকের অভিযোগ, রাস্তার বাঁকটি বিপজ্জনক। রাস্তার পাশে সতর্কবার্তাও রয়েছে। কিন্তু তা সব সময় সজরে পড়ে না। তার উপর কুয়াশা পড়লে আরও বিপজ্জনক অবস্থা দাঁড়ায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়কে আরও ভালভাবে এবং যাতে বেশ কিছুটা দূর থেকে চালকদের নজরে পড়ে এমন ভাবে সতর্কবার্তা দিলে তাঁরাও সতর্ক থাকতে পারবেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, রাস্তার এই অংশে বেআইনি কাটও দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এর ফলে এক লেনের গাড়ি অন্য লেনে ঢুকে পড়ছে। আচমকাই কোনও গাড়ি ঢুকে পড়লে যানচালকদেরও তখন আর কিছু করার থাকে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, জাতীয় সড়কে এ ধরের বেআইনি কাট অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। পুলিশের নজরদারি ও ট্রাফিক ব্যবস্থাও বাড়ানো উচিত।

বাগনান-কলকাতা রুটের এক বাসচালকের কথায়, ‘‘ওই জায়গাটি সত্যিই খুবই বিপজ্জনক। আমরা যারা নিয়মিত যাতায়াত করি তাঁরা ওই অংশে গাড়ির গতি কমিয়ে দিই। কারণ বাঁকের পাশেই জনবসতি থাকায় সামনের দিকে বেশিদূর দেখা যায় না। তার উপর বেআইনি কাট দিয়ে হামেশাই লোক ও গাড়ি যাতায়াত করে। ফলে ওখানে বিপদের সম্ভাবনা প্রবল।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিপজ্জনক এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এখানে মাত্র কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছে। কোনও ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। আবার সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও সব সময় দেখা মেলে না। ফলে দুর্ঘটনা রুখবে কে। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে এই অংশে একটি আন্ডারপাস বা সাবওয়ে তৈরি করা হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন