বাংলাদেশে বাড়ি ফিরতে গিয়ে হোমের মায়ায় কেঁদে ফেলল সজীব

অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ধরা পড়ায় ঠাঁই হয়েছিল হুগলির কামারকুন্ডুর একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হোমে। সেখানে প্রায় তিন বছর কাটানোর পর অবশেষে নিজের ঘরে ফিরতে চলেছে সজীব। বাংলাদেশের ফরিদপুরের মধুকারীর বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র সজীব মণ্ডল নদিয়ার কৃষ্ণনগরে দাদুর বাড়িতে বেড়াতে যাবে বলে ২০১২ সালের ৮ই মে বাড়ি থেকে রওনা হয়। প্রথমে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে পেট্রাপোল হয়ে এ দেশে ঢোকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কামারকুন্ডু শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩০
Share:

সজীব মণ্ডল। ঘরের পথে।—নিজস্ব চিত্র।

অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ধরা পড়ায় ঠাঁই হয়েছিল হুগলির কামারকুন্ডুর একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হোমে। সেখানে প্রায় তিন বছর কাটানোর পর অবশেষে নিজের ঘরে ফিরতে চলেছে সজীব।

Advertisement

বাংলাদেশের ফরিদপুরের মধুকারীর বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র সজীব মণ্ডল নদিয়ার কৃষ্ণনগরে দাদুর বাড়িতে বেড়াতে যাবে বলে ২০১২ সালের ৮ই মে বাড়ি থেকে রওনা হয়। প্রথমে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে পেট্রাপোল হয়ে এ দেশে ঢোকে। কিন্তু দাদুর বাড়ি যাওয়ার সঠিক পথ না জানায় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সে হুগলির ব্যান্ডেল স্টেশনে পৌঁছয়। স্টেশন চত্বরে তাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় রেল পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় সে বাংলাদেশের বাসিন্দা। কিন্তু তার কাছে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার কোনও বৈধ ছাড়পত্র না থাকায় ব্যান্ডেল রেল পুলিশ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে। অনুপ্রবেশকারী হিসাবে তার বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়। যেহেতু সজীব নাবালক তাই তাকে জুভেনাইল আদালতে হাজির করা হলে বিচারক হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকেই সজীবের ঠিকানা হয় সিঙ্গুরের কামারকুন্ডুর সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হোম কল্যাণ ভারতী। প্রায় তিন বছর ধরে হোমে থাকার ফলে বাড়ির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল সজীব। এমনকী ভবিষ্যতে আর নিজের বাড়ি ফিরতে না পারার আশঙ্কাও তাকে পেয়ে বসেছিল। তাই ক্রমশ হোমের অন্য আবাসিকদের সঙ্গে মেলামেশা বাড়িয়ে দেয় সে। হয়ে ওঠে ছোটদের কাছে প্রিয় ‘দাদা’। নিজের ব্যবহারে বড়দেরও মন জয় করে ফেলেছিল সে। তার সুন্দর আচার-ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে হুগলির গোয়েন্দা দফতর রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের সহযোগিতায় দুই দেশের রাষ্ট্রদূতের সাহায্যে সজীবের জন্মভিটেয় ফেরার ব্যবস্থা করে।

বৃহস্পতিবার সকালে যখন বাড়ি ফেরার জন্য পুলিশ ভ্যানে উঠছিল সজীব তখন আর চোখের জল সামলাতে পারেনি। কাঁদতে কাঁদতে ভ্যান থেকেই হোমের আবাসিকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে সজীব বলে, “অনেকদিন পর নিজের বাড়ি ফিরছি। খুবই ভাল লাগছে। কিন্তু এতদিন হোমের সকলের সাথে যে ভাবে মিলেমিশে থেকেছি, চলে যাওয়ার সময় তা ভেবে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।” একটু থেমে ফের সজীব বলে, “জানতাম না যে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসতে ছাড়পত্র দরকার হয়। আর এ ভুল হবে না।”

Advertisement

জেলা গোয়েন্দা দফতরের অফিসার স্বপন সিকদার বলেন, ‘‘সজীবকে ব্যান্ডেল রেল পুলিশ বৈদেশিক অনুপ্রবেশকারীর অভিযোগে ধরার পরে তার ঠিকানা হয়েছিল কামারকুন্ডুর এই হোম। গোয়েন্দা দফতর থেকে বিষয়টি রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানানো হলে তাদের উদ্যোগে ভারত এবং বাংলাদেশের উপ রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় সজীবকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়। ওকে ফেরাতে পেরে আমাদেরও ভাল লাগছে।”

সজীবের দাদু সাধু বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে বেড়াতে আসার পথেই সজীব ধরা পড়েছিল। পুলিশের মাধ্যমেই আমরা জানতে পেরেছিলাম ওকে অনুপ্রবেশের জন্য ধরা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত যে ও বাড়ি ফিরতে পারছে এটাই অনেক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন