নকল সোনার গয়না তৈরি করতে প্রয়োজন পুরনো দিনের শাড়ি ও সোনার গয়নার নকশা। আর কোনও শাড়ি-গয়না দেখে পছন্দ হলে তা থেকে নকশা তুলে নেওয়ার বদলে দেওয়া হবে স্টিলের বাসন শীতের দুপুরে বাড়ির দোরগোড়ায় এসে এমনটাই দাবি করেছিল দুই মাঝবয়সী মহিলা। প্রথমে তাদের কথায় আমল না দিলেও পরে অবশ্য ‘বিশ্বাস’ করেছিলেন শাশুড়ি ও বৌমা। আর তাতেই বাজিমাত করে কয়েক ভরি সোনার গয়না ও দামি শাড়ি নিয়ে চম্পট দিল ওই দুই মহিলা। বদলে অবশ্য তারা ওই বাড়িতে স্টিলের বালতি ও টিফিন কৌটো রেখে যায়।
বালির এই ঘটনার পড়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। একের পর এক চুরি, ব্যাঙ্কে কেপমারির ঘটনার মাঝে ফের এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা শুরু হওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে পুলিশের। এক পুলিশকর্তা বলেন, “এটা জালিয়াতির পুরনো পন্থা। আগে প্রায়ই এমন ঘটত। কাপড়ের বিনিময়ে বাসন বিক্রির নামে এলাকা চিনে যেত বাইরের মহিলারা। পরে এসে ওই একই কায়দায় হাতসাফাই করত।”
পুলিশ সূত্রে খবর, গত শনিবার দুপুরে বালির কান্তি গোস্বামী লেনের বাসিন্দা সাবিত্রী প্রধানের বাড়িতে আসে মাঝবয়সী দুই মহিলা। তাদের সঙ্গে ছিল বেশ কিছু স্টিলের বাসনপত্র। অভিযোগ, ওই দুই মহিলা সাবিত্রীদেবী ও তার বৌমা প্রতিমাদেবীকে এসে জানায়, তারা একটি নকল গয়না তৈরির কারখানায় কাজ করে। পুরনো দিনের শাড়ি ও গয়নার নকশা নিয়ে সেই গয়না তৈরি হয়। সাবিত্রীদেবীরা তাঁদের বাড়ির শাড়ি ও গয়না দিলে তা থেকে নকশা পছন্দ করা হবে। দুই মহিলা জানায়, রাস্তায় তাদের কোম্পানির লোক দাঁড়িয়ে রয়েছেন, যাঁরা নকশা পছন্দ করবেন। আর পছন্দ হলে ওই নকশা তুলে নেওয়ার বদলে মিলবে বাসন। এর পরেই প্রতিমাদেবীর থেকে একটি কঙ্কণ ও তিনটি দামি শাড়ি নিয়ে কোম্পানির লোকজনকে দেখিয়ে আনার নাম করে বেরিয়ে যায় ওই দুই মহিলা। কিছু পরেই অবশ্য তারা ফিরে এসে কয়েকটি বাসন দেয়। এর পরে আবার তারা প্রতিমাদেবী ও তার শাশুড়ির থেকে আরও কিছু পুরনো গয়না নেয় নকশা তোলার জন্য। সাবিত্রীদেবী বলেন, “আমি এতগুলো গয়না ওদের দিয়ে একা ছাড়তে চাউনি। তাই কোম্পানির লোকের সঙ্গে দেখা করব বলে সঙ্গে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় গিয়ে কথা বলার ফাঁকে ওরা আমার হাত থেকে আংটিও খুলে নেয়।” এর পরেই ওই দুই মহিলা বালি বাজারের গলি দিয়ে জিটি রোডের দিকে ছুটে পালাতে শুরু করে। সাবিত্রীদেবীও পিছনে ছুটতে শুরু করেন। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে বালির জিটি রোডের উপরে লাগানো নজরদারি ক্যামেরাগুলির ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।