যানজট থেকে মুক্তি, বাস-অটোর নিদির্ষ্ট স্ট্যান্ড চান শহরবাসী

বাসস্ট্যান্ড আছে। তবে সেখানে বাস থাকে না বললেই চলে। জেটি ঘাট আছে অথচ মেলে না লঞ্চ পরিষেবা। পরিবহণ দফতরের অফিস আছে। কিন্তু তাতে কী! আইনের তোয়াক্কা না করে রমরমিয়ে চলছে অটোরিকশা। ফলে উলুবেড়িয়া শহরে গাড়িতে ওঠা, গাড়ি থেকে নামা, ট্রেকার, অটো রিকশা ও বাসের স্ট্যান্ড সব কিছুরই ঠাঁই এখন রাস্তা। যার পরিণাম, যানজটে নাভিশ্বাস শহরবাসীর।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪৪
Share:

বাসের অভাবে মোটরভ্যানে বিপজ্জনক যাত্রা।

বাসস্ট্যান্ড আছে। তবে সেখানে বাস থাকে না বললেই চলে। জেটি ঘাট আছে অথচ মেলে না লঞ্চ পরিষেবা। পরিবহণ দফতরের অফিস আছে। কিন্তু তাতে কী! আইনের তোয়াক্কা না করে রমরমিয়ে চলছে অটোরিকশা। ফলে উলুবেড়িয়া শহরে গাড়িতে ওঠা, গাড়ি থেকে নামা, ট্রেকার, অটো রিকশা ও বাসের স্ট্যান্ড সব কিছুরই ঠাঁই এখন রাস্তা। যার পরিণাম, যানজটে নাভিশ্বাস শহরবাসীর।

Advertisement

এক সময়ে শহরের বাসস্ট্যান্ড ছিল সংশোধনাগারের উল্টোদিকে। ১৯৯৭-’৯৮ সালে ফুলেশ্বরে প্রায় দু’একর জমিতে পুরসভার উদ্যোগে গড়ে ওঠে বাসস্ট্যান্ড। খরচ হয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। প্রথম প্রথম সেখানে বাগনান-উলুবেড়িয়া, উলুবেড়িয়া-হাওড়া, আমতা-উলুবেড়িয়া প্রভৃতি রুটের বাস দাঁড়াত। এখন বাগনান-উলুবেড়িয়া এবং উলুবেড়িয়া-হাওড়া রুটের বাস বন্ধ। শুধুমাত্র আমতা-উলুবেড়িয়া এবং উদয়নারায়ণপুর-উলুবেড়িয়া এই দু’টি রুটের বাস দাঁড়ায়। এ ছাড়া দু’একটি ট্রেকার দাঁড়িয়ে থাকে এখানে। তবে যাত্রী তোলার জন্য নয়। তার চালক খালাসিরা আসেন বাসস্ট্যান্ডের ট্যাপের জলে স্নানপর্ব সারতে। ফলে বাসস্ট্যান্ড খাঁ খাঁ করে। রাতে যা সমাজবিরোধীদের আখড়া হয়ে দাঁড়ায়।

যাত্রীদের দাবি, উলুবেড়িয়ার উপর দিয়ে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা কম নয়। মাধবপুর-বোয়ালিয়া, বসিরহাট-কমলপুর, গাদিয়াড়া-ধর্মতলা রুটের সিটিসি বাস চলাচল করে শহরের উপর দিয়ে। শ্যামপুর থেকে মহকুমা আদালত-সহ মহকুমা শাসকের দফতরে বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করেন বহু মানুষ। এ ছাড়া উলুবেড়িয়া থেকেও আবার শ্যামপুরের দিকে যাতায়াত করেন বহু মানুষ। বাস ধরার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করেন গরুহাটার মোড়ে। সেখান থেকেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে ওঠেন যাত্রীরা। ফলে এলাকায় যানজট রোজকার ছবি। ফুলেশ্বরে রয়েছে সেচ দফতরের বােংলা। চড়ুইভাতির জন্য ভাড়া নিয়ে অনেকে এখানে আসেন। সামান্য হেঁটে ফুলেশ্বরের বাসস্ট্যান্ড থেকে চড়ুইভাতি করতে আসা এইসব মানুষ ধর্মতলার বাস ধরতে পারেন সহজেই। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে বাস না আসায় তাঁরা সেই সুযোগ পান না। শুধু তাই নয়, উলুবেড়িয়া থেকে বিভিন্ন রুটে অসংখ্য অটো চলে। সে সব অটোও বাসস্ট্যান্ডে আসে না। তাদের স্ট্যান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে গরুহাটার মোড়, মহকুমা শাসকের দফতরের সামনের ফুটপাথ, উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের পিছনের চত্বর। এ ভাবে যত্রতত্র অটো দাঁড়িয়ে থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়।

Advertisement

বেহাল বাসস্ট্যান্ড।

২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রিমোট কন্ট্রোলে বোতাম টিপে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছিলেন উলুবেড়িয়া জেটিঘাটের। কথা ছিল এই জেটিঘাট থেকে লঞ্চ পরিষেবা চালু হবে। উলুবেড়িয়া-অছিপুর (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) খেয়াঘাটের পাশে পরিবহণ এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের যৌথ উদ্যোগে জেটিঘাটটি তৈরি হয়। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি এখান থেকে লঞ্চ পরিষেবা শুরু করে। চালু হয় উলুবেড়িয়া-বজবজ লঞ্চ পরিষেবা। কিন্তু কয়েক দিন পরেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। সমিতি সূত্রের খবর, উলুবেড়িয়া থেকে বজবজ রুটে যাত্রী হত না বললেই চলে। তাই এই পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা প্রবীর রায় বলেন, “উলুবেড়িয়া থেকে অছিপুর পর্যন্ত লঞ্চ পরিষেবা চালু করা হলে যাত্রী অনেক বেশি হত। এই রুটে যাতে লঞ্চ পরিষেবা চালু করা যায় তার জন্য আমরা বিভিন্ন মহলে চিঠি দিয়েছি।” রাজ্য জলপথ পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, অছিপুরে কোনও জেটিঘাট নেই। ফলে উলুবেড়িয়া থেকে আছিপুর পর্যন্ত লঞ্চ চালানোয় সমস্যা রয়েছে। দফতরের এক কর্তার দাবি, সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে এই রুটে লঞ্চ চালালে লাভ হবে। ফলে জেটিঘাট করার ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন মহলে তদ্বির করা হচ্ছে।

বোতাম টিপেই পরিবহণ দফতরের স্থানীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসকের দফতরেই রয়েছে এই কার্যালয়। বেআইনি পরিবহণ নিয়ে যাঁদের নজরদারি থাকার কথা। কিন্তু বেআইনি অটোরিকশার রমরমা কমেনি, বরং তা বাড়ছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে কার্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, তাঁদের হাতে অটোর লাইসেন্স দেওয়া বা বেআইনি অটো ধরার কোনও ক্ষমতা নেই। তা হলে কী করেন তাঁরা? প্রশ্নের উত্তরে ওই আধিকারিক জানান, গাড়ির নম্বার প্লেট দেওয়া, লাইসেন্সে নাম পরিবর্তন করার মতো মামুলি কাজ হয় এখানে।

বিভিন্ন রুটের বাস কেন আসে না বাসস্ট্যান্ডে। অটো-ট্রেকারই বা বাসস্ট্যান্ডে ঢোকে না কেন? উত্তরে বাস মালিকেরা জানান, ওই বাসস্ট্যান্ডে মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তাটি অপরিসর। ফলে বাসস্ট্যান্ডে ঢুকতে গেলে অনেকটা সময় চলে যায়। তাই বাসস্ট্যান্ড এড়িয়ে চলেন তাঁরা।

আর অটো চালকদের বক্তব্য, বিভিন্ন রুটে অসংখ্য অটোরিকশা নেমেছে। বেড়েছে প্রতিযোগিতা। তাই যাত্রী ধরতে যে যার মতো রাস্তার উপরেই স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন। বিনা লাইসেন্সের অটো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য চালকেরা সব দায় চাপিয়ে দিয়েছেন পরিবহণ দফতরের ঘাড়ে। তাঁদের দাবি, সবাই লাইসেন্স করতে চান। কিন্তু পরিবহণ দফতরই লাইসেন্স দিচ্ছে না।

মাঝখান থেকে পরিবহণ দফতর আর যানচালকদের চাপানউতোরে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের।

(শেষ)

ছবি: সুব্রত জানা।

কেমন লাগছে আমার শহর?

আপনার নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-উলুবেড়িয়া’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০১।
ফেসবুকেও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। www.facebook.com/anandabazar.abp

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন