শহরের জিটি রোডে এই লেভেল ক্রসিংয়েই থমকে যায় গাড়ির গতি।
নানা সমস্যার নাগপাশে গঙ্গার পশ্চিমপাড়ের প্রাচীন শহরটার নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়।
বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের হাত ধরে যেমন বাড়ছে জনসংখ্যা তেমনই বেড়েছে যানবাহনের চাপ। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধে যানজটের ফাঁসে দম আটকে যাওয়ার জোগাড় শহরবাসীর। শহরের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে জিটি রোড। কিন্তু তাতে কী! ওই রাস্তার উপরে তারকেশ্বর এবং হাওড়া মেন শাখার দু’টি লেভেলক্রসিংই যাবতীয় ভোগান্তির মূল। ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে উড়ালপুল আর আন্ডার পাস চেয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়াজ তুলে আসছেন এখানকার মানুুষ। কিন্তু সে সব আর কোথায়?
শেওড়াফুলি স্টেশনের অদূরে নিমাইতীর্থ গঙ্গার ঘাট। তারকেশ্বর মন্দিরের পথে পূণ্যার্থীরা এখান থেকেই গঙ্গার জল নিয়ে যাত্রা করেন। কিন্তু গঙ্গার লাগোয়া শেওড়াফুলি স্টেশনের লেভেলক্রসিংয়ে তাঁদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। কারণ একবার লেভেলক্রসিং পড়ে গেলে তা উঠতে দীর্ঘ সময় কেটে যায়। সময় বাঁচাতে জোর করে লাইন পেরোতে গিয়ে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান কম নয়। অবস্থা আরও চরমে ওঠে শ্রাবণে। সমস্যা মেটাতে এখানে আন্ডারপাসের দাবি উঠলেও কি বাম কি তৃণমূল, সব শাসকের আমলেই তা উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে।
পুর পরিষেবার হাল নিয়েও একই চিত্র। দোরগোড়ায় পুরভোট চলে আসায় পুর পরিষেবার বাস্তব চিত্র নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের। চলছে কি পেয়েছি আর কী পাইনির চুলচেরা হিসাব। বসে নেই শাসক দলও। কী দিয়েছেন আর কী কী পরিষেবা দিতে চান সে সব নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন তাঁরাও। প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব চেহারার সেই চাপান উতোরের মধ্যেই উঠছে নানা প্রশ্ন। শহরে নেই কেন কোনও হাসপাতাল। কোনও ডিগ্রি কলেজ। অথচ কলকাতার থেকে তো খুব দূরে নয় এ জনপদ।
শেওড়াফুলি স্টেশনের এই অংশে আন্ডরপাস তৈরির দাবি উঠেছে।
বস্তুত বৈদ্যবাটিতে বর্তমান পুরবোর্ড যখন ক্ষমতায় আসে তখন পুরসভার মাথায় ৪২ কোটির দেনা। বিরুদ্ধ পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই পরিষেবার হাল ধরেন বর্তমান পুরকর্তৃপক্ষ। আর নাগরিকদের ভাল পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছতে গিয়ে তাঁরা এমন সব প্রকল্প হাত দিয়েছেন যেখানে জনপ্রিয়তা সহজলোভ্য। তারকেশ্বর মন্দিরে যেতে শেওড়াফুলির নিমাইতীর্থ গঙ্গার ঘাটে স্নান করেন পূর্ণ্যাথীরা। বছর কয়েক আগে নানা অভিযোগ ওঠে মহিলাদের তরফে। এরপরই পুর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ঘাটে ব্যবস্থা হয় সিসি টিভির নজরদারির। বসে সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রহরা। মহিলাদের পোশাক বদলের বিশেষ ব্যবস্থা থেকে শৌচাগারের সংখ্যা বাড়ানো, ঘাটে দুর্ঘটনা এড়াতে ডুবুরি রাখা নানা পরিষেবা ব্যবস্থা হয়। যদিও যানজট সমস্যার সমাধান অধরাই থেকে গিয়েছে। নানা ব্যবস্থা সত্ত্বেও জিটি রোড বা সংলগ্ন এলাকায় যানজট পুরোপুরি এড়ানো যায়নি।
পুরসভার চেয়ারম্যান অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, “বৈদ্যবাটি রেলগেটে উড়ালপুলের দাবি মানুষের দীর্ঘদিনের। রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পের অনুমোদন করে। কিন্তু রাজ্য পূর্ত দফতর জিটি রোড অপরিসরতার কারণ দেখিয়ে উড়ালপুলের প্রস্তাব বাতিল করে। যদিও শ্রীরামপুরে কিন্তু উড়ালপুলের অনুমোদন দিয়েছে পূর্ত দফতর। অথচ এখানে কেন তা দেওয়া হল না জানা নেই।” একইভাবে তাঁর বক্তব্য, “শেওড়াফুলি স্টেশনেও আন্ডারপাস অত্যন্ত জরুরি। অথচ বার বার রেলের কাছে আবেদন সত্ত্বেও সেই কাজও হয়নি।”
(চলবে)
ছবি: দীপঙ্কর দে।