যত্রতত্র শৌচকর্ম নয়, বড়দের সচেতন করতে ময়দানে ছোটোরা

সকাল সাড়ে ৭ টাতেই কোদাল, ঝুড়ি নিয়ে পড়ুয়ার দল হাজির নদীর ধারে। তাদের সঙ্গে হাজির মাস্টারমশাইরাও। তার পর দু’ঘণ্টা ধরে চলল নদীর ধারে মল পরিষ্কার করার কাজ। এভাবেই আরামবাগের পারুল কাশীনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৩ জন ছাত্রছাত্রী সোমবার স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডে হানা দিয়ে বাঁশ বাগান, ঝোপঝাড় বেষ্টিত মাঠ, দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ ইত্যাদি সম্ভাব্য মলত্যাগের জায়গা ঘুরে ঘুরে কোদাল নিয়ে মানুষের মল পরিষ্কার করল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:০১
Share:

দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধের ধারে কোদাল নিয়ে কাজে নেমে পড়েছে খুদেরা। ছবি: মোহন দাস।

সকাল সাড়ে ৭ টাতেই কোদাল, ঝুড়ি নিয়ে পড়ুয়ার দল হাজির নদীর ধারে। তাদের সঙ্গে হাজির মাস্টারমশাইরাও। তার পর দু’ঘণ্টা ধরে চলল নদীর ধারে মল পরিষ্কার করার কাজ। এভাবেই আরামবাগের পারুল কাশীনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২৩ জন ছাত্রছাত্রী সোমবার স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডে হানা দিয়ে বাঁশ বাগান, ঝোপঝাড় বেষ্টিত মাঠ, দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ ইত্যাদি সম্ভাব্য মলত্যাগের জায়গা ঘুরে ঘুরে কোদাল নিয়ে মানুষের মল পরিষ্কার করল। আর এ সব কাজে তাদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহারকান্তি কোনার, সন্দীপ রায় সহ ৬ জন শিক্ষক। মাঠে গর্ত করে সেখানে মল ফেলে মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছিল। এ দিন এ ভাবেই নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ পালন কর্মসূচি বা অভিযানের সূচনা করল পারুল কাশীনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়।

Advertisement

সারা রাজ্য জুড়ে সমস্ত স্তরের স্কুলগুলি থেকে এই অভিযান চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। পারুল কাশীনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এ দিন অভিযান চালায় স্থানীয় বাঁধপাড়া, সতীতলা এবং ময়রাপাড়ায়। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ আলি, নাসরিন খাতুন, তৃতীয় শ্রেণি সৃষ্টি ঘোষ, দ্বিতীয় শ্রেণির মানোয়ার আলি কে ছিল না কাজের তালিকায়। গোয়েন্দাদের ভঙ্গিতে কাঁচা মল এবং শুকনো মলের তল্লাশি, দেখতে পেলেই ‘স্যার পেয়েছি’ বলে এমন ভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল যেন মনে হবে কিছু আবিষ্কার করেছে।

আর এ ভাবে যতই মলের তল্লাশি চালাচ্ছিল পড়ুয়ার দল, ততই লজ্জায় মুখ লুকোতে হচ্ছিল এ সব দেখতে মাঠের ধারে জড়ো হওয়া লোকজনকে। স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তথা ‘পরিবেশ মন্ত্রী’ (প্রতি স্কুলেই ৫ জন করে মন্ত্রী করা হয়েছে) সৃষ্টি ঘোষ বলে, “পরের দিন আমরা ঘরে ঘরে ঘুরে দেখব কাদের শৌচাগার নেই। আবার কাদের শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও মাঠে যাচ্ছে।” ‘প্রধান মন্ত্রী’ চতুর্থ শ্রেণির মহম্মদ আলি বলে, “যাঁদের শৌচাগার নেই বা থাকলেও খোলা জায়গায় মলত্যাগ করছেন তাঁদের নিয়ে বুধবার বৈঠক করব আমরা। তাঁদের বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য বলব। বোঝাবো বাইরে যেখানে সেখানে মলত্যাগ করলে পরিবেশের এবং জনস্বাস্থ্যের কি ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে মাস্টারমশায়রাও থাকবেন।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহারকান্তি কোনার বলেন, “নির্মল বিদ্যালয় অভিযান ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্বেই চলবে। আমরা ওদের সহযোগিতা করব।

Advertisement

আর কী ভাবছে আরামবাগ পুরসভা?

পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা যে সব পরিবারগুলো চিহ্নিত করছে, তারা যাতে দ্রুত বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে সে বিষয়ে নজরদারি করা হবে। প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তার বিষয়টিও খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন