শ্যামনগরে গঙ্গায় নিখোঁজ তিন ছাত্র

স্নান করার জন্য গঙ্গার ঘাটে বাঁধা নৌকো থেকে জলে ঝাঁপিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র। তলিয়ে যায় সে। তাকে উদ্ধার করতে আরও দুই সহপাঠী নদীতে ঝাঁপায়। তলিয়ে যায় তারাও। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর কালীবাড়ি ঘাটে। তলিয়ে যাওয়া তিন কিশোর আকাশ অগ্রবাল, আদিত্য পাঠক ও মোহন বাত্রা ‘শ্যামনগর ন্যাশনাল মডেল স্কুল’-এর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জগদ্দল শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৪ ০২:০৩
Share:

আদিত্য পাঠক

স্নান করার জন্য গঙ্গার ঘাটে বাঁধা নৌকো থেকে জলে ঝাঁপিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র। তলিয়ে যায় সে। তাকে উদ্ধার করতে আরও দুই সহপাঠী নদীতে ঝাঁপায়। তলিয়ে যায় তারাও।

Advertisement

শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর কালীবাড়ি ঘাটে। তলিয়ে যাওয়া তিন কিশোর আকাশ অগ্রবাল, আদিত্য পাঠক ও মোহন বাত্রা ‘শ্যামনগর ন্যাশনাল মডেল স্কুল’-এর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সকলেরই বয়স তেরো থেকে চোদ্দো বছরের মধ্যে। শনিবার রাত পর্যন্ত কারও খোঁজ মেলেনি। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান সি সুধাকর বলেন, “তিন ছাত্র জলে তলিয়ে গিয়েছে খবর পেয়েই ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। আজ, রবিবার ফের তল্লাশি চালানো হবে।”

সপ্তাহ খানেক আগেই হুগলির তেলিনিপাড়া ঘাট থেকে ভুটভুটিতে শ্যামনগর ঘাটে আসার পথে তলিয়ে যায় দুই ছাত্র। পরে তাদের দেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনার জেরে শ্যামনগর ঘাটে ভাঙচুর চলেছিল। তখন থেকেই ওই ঘাটে খেয়া পারাপার বন্ধ। ফলে, এ দিন ঘটনার সময়ে আশপাশে কেউ ছিল না। পুলিশ সূত্রের খবর, ফেরিঘাট লাগোয়া মাঠে এ দিন সকালে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল

Advertisement


মোহন বাত্রা ও আকাশ অগ্রবাল।

শ্যামনগর ন্যাশনাল মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছয় ছাত্র। সেই দলেই ছিল আকাশ, আদিত্য ও মোহন। আকাশ থাকে শ্যামনগর গর্ভমেন্ট কোয়ার্টারে। আদিত্যের বাড়ি ভাটপাড়া রায় স্টুডিও এলাকায় ও মোহনের বাড়ি জগদ্দলের গোলঘর এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে শনিবার স্থানীয় সবুজসঙ্ঘের মাঠে ন্যাশনাল মডেল স্কুলের প্র্যাকটিস ফুটবল ম্যাচ চলছিল। তবে সম্প্রতি স্কুল কর্তৃপক্ষ ম্যাচ বন্ধ করে শনিবার নিয়মমাফিক ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু এ দিন সকালে ওই ছয় ছাত্র স্কুলের প্র্যাকটিস ফুটবল ম্যাচ আছে বলেই বাড়ি থেকে বেরোয়। তারপর তারা যায় কালীবাড়ি ফেরিঘাট সংলগ্ন মাঠে।

ঘণ্টা দেড়েক খেলার পরে নদীতে স্নান করবে বলে ঘাটে বাঁধা নৌকায় ওঠে ছ’জন। প্রত্যক্ষদর্শী বাকি তিন ছাত্র জানিয়েছে, নৌকা থেকে প্রথমে ঝাঁপ দেয় আকাশ। তাকে তলিয়ে যেতে দেখে আদিত্য জলে ঝাঁপায়। আদিত্যকে আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করে আকাশ। সামলাতে না পেরে দু’জনেই তলিয়ে যায়। এর পরে জলে ঝাঁপ দেয় মোহন। সে-ও তলিয়ে যায়। নিখোঁজদের পরিবার সূত্রে খবর, আদিত্য ছাড়া কেউই সাঁতার জানত না। চোখের সামনে তিন বন্ধুকে তলিয়ে যেতে দেখে বাকি তিন জন ভয় পেয়ে যায়। তাদের চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় জগদ্দল থানায়। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। ছয় ডুবুরি-সহ কুড়ি জনকে নিয়ে নদীতে তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশও ভুটভুটি নিয়ে তল্লাশি চালায়। কিন্তু রাত পর্যন্ত কারও খোঁজ মেলেনি।

আদিত্যর বাবা, পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী তারকনাথবাবু জানান, ওই ঘাটে কয়েক জন ছেলে তলিয়ে গিয়েছে খবর পেয়ে তিনি স্কুলে যোগাযোগ করেছিলেন। পরে ঘাটে এসে সব জানতে পারেন তিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় সাহার বক্তব্য, “ওই ছাত্ররা কাউকে না জানিয়েই মাঠে খেলতে গিয়েছিল।”

ছেলে তলিয়ে যাওয়ার খবরে ভেঙে পড়েছেন মোহনের বাবা নবরতন বাত্রা। ২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী-দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁর দাদা রাজেশকুমারের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে। ডিএনএ না মেলায় এখনও মেয়ের দেহ পাননি রাজেশবাবু। উল্লেখ্য, জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃত সতেরো জনের দেহাংশ সরকারি মর্গে সংরক্ষিত রয়েছে। রাজেশবাবু বলেন, “আমাদের পরিবারে যেন অভিশাপ লেগেছে। একের পর এক মৃত্যু হয়েই চলেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন