শ্রমিক-মালিক ডামাডোলে ফের জুটমিল বন্ধ হুগলিতে। এ বার বন্ধ হল ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস জুটমিল। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে সোমবার মিলের গেটে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের ওই সিদ্ধান্তে মিলের প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক সমস্যায় পড়লেন। ভদ্রেশ্বরে এখন জগদ্ধাত্রী এবং ছটপুজোর তোড়জোড় চলছে জোরকদমে। উত্সবের আবহে মিল বন্ধের খবরে অ্যাঙ্গাসের শ্রমিক মহল্লায় আঁধার নেমেছে।
মহকুমাশাসক (চন্দননগর) পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘প্রশাসনকে কিছু না জানিয়েই মিল বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এখন আলোচনার মাধ্যমে ফের উত্পাদন চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে হবে সবপক্ষকে।’’
চন্দননগরের ডেপুটি লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মিল কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করে মিল খোলার চেষ্টা করা হবে।’’
মিল ও প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্যাচিং (যেখানে পাট ঝাড়াই-বাছাই হয়) বিভাগে অতিরিক্ত শ্রমিক রয়েছে জানিয়ে রবিবার সেখানকার ১৫ জনকে অন্য বিভাগে কাজ করতে বলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকদের সন্দেহ হয়, তাঁদের ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যেই ওই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে কি না তা নিয়ে। এই নিয়েই বিরোধের সূত্রপাত হয়। এরপর অন্য বিভাগে কাজ করতে যেতে শ্রমিকেরা রাজি হননি। তখনই কর্তৃপক্ষ তাঁদের বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর জেরে মিলের অন্য বিভাগের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কাজ করতে অস্বীকার করেন তাঁরাও। ফলে মিলে বন্ধ হয়ে যায় উত্পাদন।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে মিল বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। মিল বন্ধের খবরে উত্তেজনা ছড়ায়। গোলমাল এড়াতে মিলের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ব্যাচিং বিভাগের কর্মী রাজেন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ অত্যাচার চালাচ্ছেন। প্রয়োজনের তুলনায় কম লোক দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করানো হচ্ছে। দু’দিন বাদেই ছটপুজো। খুব বিপদে পড়ে গেলেন শ্রমিকেরা।’’ সুদর্শন পান্ডে এবং রামেশ্বরপ্রসাদ সিংহ নামে আরও দুই কর্মীর কথায়, ‘‘আধুনিকীকরণের নামে শোষণ চলছে। মিলে ভালই উত্পাদন হচ্ছিল। কোনও সমস্যা ছিল না। কর্তৃপক্ষই ইচ্ছে করে পরিস্থিতি জটিল করছেন।’’
মিলে অচলাবস্থার মধ্যেই শ্রমিকেরা অন্য আরও একটি অভিযোগ এনেছেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মিলে দীর্ঘদিন কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, “২০১০ সালে নতুন মেশিন কেনার পরে তিনের বদলে দু’টি শিফট চালু করা হয়। সেই সময় কিছু দিনের মধ্যেই তিন শিফটে কাজ চালুর আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকরা তা মেনেও নেন। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।”
মিলের বর্তমান সমস্যা নিয়ে অবশ্য কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানতে চাননি। মিলেক এক পদস্থ কর্তা জানান, কোনও শ্রমিককে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে সরানো হতেই পারে। এর সঙ্গে কাজ হারানোর কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ সেই অজুহাত দেখিয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিলেন। ফলে মিল বন্ধ করা ছাড়া অন্য রাস্তা ছিল না।”