ভাঙচুরের পর। হেস্টিংস জুটমিলে বুধবার।
কখনও বকেয়া না-মেটানো, কখনও বা গ্র্যাচুইটি কিংবা শিফ্ট কমিয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিযোগহুগলির বিভিন্ন চটকলে শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্ব নতুন নয়।
বুধবার তেমনই এক বিবাদে উত্তাল হল রিষড়ার হেস্টিংস জুটমিল। উত্তপ্ত শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আহত হন অন্তত তিন জন পুলিশ।
ক’মাস আগে, শ্রমিক অসন্তোষ সামাল দিতে গিয়ে শ্রমিকদের মারধরে মারা গিয়েছিলেন ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক চটকলের সিইও হরিকিষান মাহেশ্বরী। শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুট ও ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস কিংবা ভিক্টোরিয়া চটকলও কয়েক মাসে সাক্ষী থেকেছে বিক্ষিপ্ত শ্রমিক অসন্তোষের। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন হেস্টিংস চটকল।
শিফ্ট কমিয়ে দেওয়া নিয়ে ওই চটকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই গণ্ডগোল চলছিল শ্রমিকদের। বুধবার মালিক পক্ষ এ ব্যাপারে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতেই খেপে ওঠেন শ্রমিকরা। চটকলের মধ্যেই শুরু হয় ভাঙচুর। পরিস্থিতি সামাল দিতে রিষড়া থানা থেকে পুলিশ আসে। কিন্তু মারমুখী কয়েকশো শ্রমিককে সামাল দেওয়া জনা কয়েক পুলিশ কর্মীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। পুলিশের অভিযোগ, এই সময়ে শ্রমিকদের জটলা থেকে উড়ে আসা ইটের ঘায়ে গুরুতর জখম হন তিন পুলিশ কর্মী। এঁদের মধ্যে ধনঞ্জয় ঘোষ নামে এক কনস্টেবলের আঘাত গুরুতর বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হাসপাতালে জখম পুলিশকর্মী।
সংখ্যায় কম থাকায় প্রাথমিক ভাবে পুলিশ পিছু হটলেও পরে রিষড়া-লাগোয়া শ্রীরামপুর, ডানকুনি, উত্তরপাড়া থানা থেকে বড়সড় বাহিনী নিয়ে আসা হয়। অভিযোগ, এর পরেই লাঠি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ১২ জন বিক্ষোভকারী গ্রেফতারও হন। এ দিনের শ্রমিক অসন্তোষের জেরে চটকলে উৎপাদন থমকে যায়। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে রিষড়ায় পুলিশকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে পুলিশ লাঠি চালায়নি।”
কর্তৃপক্ষের দাবি, এত দিন তিনটি শিফ্টে কাজ হচ্ছিল। তাঁদের দাবি যন্ত্রপাতির গণ্ডগোল দেখা দেওয়ায় তিনের বদলে দু’টি শিফ্টে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়। মিলের সিইও শম্ভুনাথ পালের অভিযোগ, “ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণার পরেই শ্রমিকরা ভাঙচুর শুরু করে।” পুলিশও জানায়, শ্রমিক-ছাঁটাইয়ের ঘোষণা শুনেই কাজ হারানো শ্রমিকরা চটকলে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। চটকলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাড়িতেও ওই সময়ে ভাঙচুর চালানো হয় বলে খবর।
শম্ভুবাবুর দাবি, শিফ্ট কমানো এবং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক’দিন আগেই ১২টি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলি যে সায় দেয়নি, চটকলের আইএনটিটিইউসি-র সহ-সভাপতি শাকির আলির কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিক পক্ষ। আমাদের সঙ্গে আলোচনা হলেও ওই সিদ্ধন্তে সায় ছিল না আমাদের।”
হেস্টিংস চটকলের এআইটিইউসি-র সভাপতি প্রাণেশ বিশ্বাসও এ ব্যাপারে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মালিক পক্ষের দিকে। তাঁর কথায়, “হুগলিতে ১৪টি মিলের অবস্থাই তথৈবচ। অধিকাংশ চটকলই সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন চলে। এ অবস্থায় শিফ্ট কমানো মানে শ্রমিকদের ভাত কেড়ে নেওয়া।”
শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তথা বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত অবশ্য মনে করেন সরকারের গড়ে দেওয়া ‘কমিটি’ এই সমস্যার সমাধান করবে। তিনি বলেন, “মিলের সমস্যা মেটাতে শ্রম দফতর মালিক-শ্রমিক, সব পক্ষকে নিয়েই একটা তদারকি কমিটি গড়ে দেবে। আশা করা যায়, তারাই সমস্যার সমাধান করতে পারবে।”
—নিজস্ব চিত্র।