শ্রমিকদের প্রাপ্য গ্র্যাচুইটির টাকা না দেওয়ায় হুগলির দু’টি চটকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দিল হুগলি জেলা প্রশাসন। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে একের পর এক চটকলে অসন্তোষ হলেও এত কড়া সিদ্ধান্ত ইদানীং কালে নেওয়া হয়নি।
ভদ্রেশ্বরের গোন্দলপাড়া এবং ভিক্টোরিয়া জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের দীর্ঘদিন ধরেই গ্র্যাচুইটি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের তরফে কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের বকেয়া মিটিয়ে দিতে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছিল।
কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। হুগলির উপ-শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর রায় সম্প্রতি শ্রমিক এবং মিল কর্তৃপক্ষ দু’পক্ষকে ডেকে শুনানি করেন। কিন্তু তার পরেও মিল মালিকেরা টাকা মেটাননি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দু’টি চটকলের ছ’জন শ্রমিকের বকেয়া নিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে শুনানি ছিল। সেখানে দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে চন্দননগর মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী চটকল দু’টির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করার সিদ্ধান্ত নেন। রাতে মহকুমাশাসক বলেন, “গরিব শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর জন্য আমরা ওই দুই চটকলের কর্তাদের বারবার অনুরোধ করেছি। ওঁরা তাতে কর্ণপাত করেননি। তাই সাময়িক ভাবে ওঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার মতো কড়া ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।”
রাজ্যের শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত বলেন, “রাজ্যের চটকলগুলিতে শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন না। এমনকী অবসরকালীন টাকাও পাচ্ছেন না। শ্রমিকদের টাকা আদায়ে এ বার প্রশাসন কঠোর হবে।”
প্রশাসনের এই কড়া অবস্থানের ফলে কিছুটা হলেও চাপে পড়ে গিয়েছেন চটকল কর্তৃপক্ষ। তবে ভিক্টোরিয়া জুটমিলের অন্যতম কর্তা রাজেন্দ্রকুমার সিংহ দাবি করেন, “আমি কলকাতার বাইরে আছি। কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।”
প্রত্যাশিত ভাবেই, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মঞ্চ এই সিদ্ধান্তে খুশি। চন্দননগরে এই মঞ্চ গড়ে শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ের চেষ্টী চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন কর্তা তথা আইনজীবী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। ওই সংগঠনের সম্পাদক গৌতম গুহরায় বলেন, “বকেয়া না পেয়ে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ শ্রমিকেরা অশক্ত শরীরে চিকিৎসা করাতে না পেরে মারা যাচ্ছেন। আমি নিজে চটশ্রমিক। সামান্য বেতন পেতাম। কিন্তু সেই সামান্য টাকা সম্বল করেই আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা লড়ছি। প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে শ্রমিকদের লড়াইয়েরই সাময়িক জয় হল।”
আইএনটিটিইউসি-র হুগলি জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউতও বলেন, “এটা ভাল সিদ্ধান্ত। বহু শ্রমিকই বকেয়া না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। প্রশাসন কড়া হওয়ায় এখন যদি মিল মালিকদের চেতনা ফেরে।”
সিটুর রাজ্য নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “এ তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হল। বাস্তবে কতটা কী হচ্ছে, খোঁজ নেব। কিন্তু ভিক্টোরিয়া-সহ রাজ্যের সব চটকলে যা চলেছে, তাতে রাজ্য সরকারের ভূমিকা তো নীরব দর্শকের। সরকার ঠিক ভাবে চটকল চালাতে বাধ্য করুক মিল মালিকদের, না হলে গরিব শ্রমিকেরা যে মারা পড়ছে!”