সিবিআই থেকে বাঁচতে মানুষ আর ভগবানেই ভরসা পুরমন্ত্রীর

সিবিআই থেকে বাঁচতে ঈশ্বরেই আস্থা রাখলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি)। সারদার ফাঁস যে তাঁর গলাতেও ক্রমেই চেপে বসছে, সে কথা এ দিন হুগলির চন্দননগরের রবীন্দ্রভবনে জেলার পুর প্রতিনিধিদের ভিড়ে ঠাসা সম্মেলনে কার্যত কবুল করেন পুরমন্ত্রী। দিন কয়েক আগে সারদা মামলায় যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং বর্তমানে প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত আসিফ খান বর্ধমানে মন্তব্য করেছিলেন, এ বার ফিরহাদ হাকিম তথা ববিকেও ডাকবে সিবিআই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৩
Share:

বুধবার চন্দননগরে পুর-সম্মেলনে ফিরহাদ হাকিম। ছবি: তাপস ঘোষ।

সিবিআই থেকে বাঁচতে ঈশ্বরেই আস্থা রাখলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি)। সারদার ফাঁস যে তাঁর গলাতেও ক্রমেই চেপে বসছে, সে কথা এ দিন হুগলির চন্দননগরের রবীন্দ্রভবনে জেলার পুর প্রতিনিধিদের ভিড়ে ঠাসা সম্মেলনে কার্যত কবুল করেন পুরমন্ত্রী। দিন কয়েক আগে সারদা মামলায় যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং বর্তমানে প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত আসিফ খান বর্ধমানে মন্তব্য করেছিলেন, এ বার ফিরহাদ হাকিম তথা ববিকেও ডাকবে সিবিআই। এ দিন সম্মেলনে সেই সিবিআইয়ের কথা তুলে ফিরহাদ বলেন, “সিবিআই ফাঁসালে ফাঁসাক। সামনে আপনারা। আর উপরে ভগবান। তিনিই বিচার করবেন।’’

Advertisement

পুর নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই তৃণমূল নিজের পায়ের নীচের জমি যাচাই করে নিতে কিছুটা আগেভাগেই ময়দানে নেমে পড়েছে। দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও প্রাশসন সূত্রের খবর, চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই নির্বাচন হওয়ার কথা। তাই কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়ে রাজ্যে শাসকদল ময়দানে ‘ওয়ার্মআপে’ নেমে পড়েছে। দল ছাড়ার হিড়িক থেকে নেতা-নেত্রীদের গোঁসা কোনও কিছুই বাদ যায়নি মন্ত্রীর কথায়। এমনকী মঞ্চে উপস্থিত রাজ্যের ‘কোণঠাসা’ মন্ত্রী রচপাল সিংহের সিঙ্গুর আন্দোলনে অবদানের কথাও পুরপ্রতিনিধিদের সামনে বলতে ভোলেননি। কেন না, বিজেপিতে যোগদানের ক্ষেত্রে বাজারে তৃণমূলের যে সব নাম ঘোরাফেরা করছে তার মধ্যে রচপালও আছেন। কিছুটা গোঁসা করেই যে বিজেপি-র দিকে তিনি ঝুঁকে আছেন, তাও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অজানা নয়। এ হেন অবস্থায় রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর মুখে রচপালের প্রশংসা শুনে তাই উপস্থিত অনেকেই বাঁকা হাসি হেসেছেন। মন্ত্রীর প্রশংসায় সুযোগ বুঝে প্রাক্তন এই দুঁদে আইপিএসও দলে নিজের ‘নম্বর’ ধরে রাখতে এদিন আশ্রয় করেন জনপ্রিয় সায়েরিকে। তিনি বলেন, ‘‘বাঁহে পাকাড় লে, শির যায়--লেকেন উসকে ছোড়ে নেহি। সিএম ম্যামের আজীবন হাত ধরে থাকব। তাতে গর্দান যায় তো যাক। জান কবুল।’’ সায়েরি শেষ হলে উল্লসিত প্রতিনিধিরা হাততালিতে সভা জমিয়ে দেন।

দল ভাঙানো প্রসঙ্গে বিজেপির অর্থ আর সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নেন ফিরহাদ। পুর প্রতিনিধিদের উজ্জীবিত করতে এ দিন চেষ্টার কসুর করেননি তিনি। দল ভাঙার প্রসঙ্গে মন্ত্রীর সাফাই, ‘‘দু’একটা পাগল যায় তো যাক। তাতে কিছু এসে যাবে না। আসলে আমরা কেউ নই। পিছনে ছবিতে যাঁকে দেখছেন (মমতা ছবির দিকে আঙুল নির্দেশ করে) তাঁর জন্যই আমি এখানে। আর আপনারা দর্শক। ছবিটা সরিয়ে নিলে হল ফাঁকা।’’ কিছুটা আবেগতাড়িত হয়েই বলেন, “আজ ওই ছবি চেয়েছেন বলেই আমি মন্ত্রী। কাল যদি বলেন ফিরহাদ তুমি নও, দিলীপ যাদব (কাউন্সিলার) মন্ত্রী হবে। তখন আমি কর্মী।’’

Advertisement

এ দিন সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের তালিকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম থাকলেও তাঁরা আসেননি। তাঁদের জন্য নিধারিত পুলিশি কনভয় অপেক্ষা করে শেষমেষ ফিরে যায়। এ ব্যাপারে জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পুরসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের প্রস্তুতি প্রতিনিধি সম্মেলন ছিল। তাই পুরমন্ত্রী এসেছিলেন। তবে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন