Durgapur Expressway

গর্তে ভরা সড়কে ঝুঁকির যাত্রা

এই রাস্তায় দুর্গাপুরের বাঁশকোপা, মেমারির পালশিট ও হুগলির ডানকুনিতে ‘টোল’ আদায় করা হয়। তার পরেও কেন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হবে, প্রশ্ন যাত্রীদের।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০১:১০
Share:

বর্ধমানের নবাবহাটের কাছে। ছবি: উদিত সিংহ

যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ!

Advertisement

অনেক জায়গায় পিচের প্রলেপ উঠে গিয়েছে। কিছু জায়গায় দু’পা অন্তর ছোট-বড় গর্ত। কোনও সাধারণ রাস্তা নয়, এ ছবি জাতীয় সড়কের। যাতায়াত করতে গিয়ে যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে, মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে— অভিযোগ অনেক যাত্রীর।

কলকাতা থেকে আসানসোল পর্যন্ত রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কলকাতামুখী লেনের অবস্থা ভয়াবহ। যে রাস্তা দিয়ে মসৃণ ভাবে দ্রুত গতিতে গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা, সেখানে পদে-পদে ব্রেক কষতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক চালক। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াছে রাতে। বৃষ্টি নামলে তো কথাই নেই, বলছেন ভুক্তভোগীরা। সোমবার রাতে বর্ধমানের আমড়া গ্রামের কাছে রাস্তায় গর্তে পড়ে মোটরবাইক নিয়ে ছিটকে পড়েন এক যাত্রী। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে পাঠায়।

Advertisement

এই রাস্তায় দুর্গাপুরের বাঁশকোপা, মেমারির পালশিট ও হুগলির ডানকুনিতে ‘টোল’ আদায় করা হয়। তার পরেও কেন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হবে, প্রশ্ন যাত্রীদের। তাঁদের অভিযোগ, সড়কের কলকাতামুখী লেনের অবস্থা বেশি খারাপ।

কিছু দিন আগে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী রাস্তার হাল ফেরাতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) সঙ্গে কথা বলেন। জাতীয় সড়কের এই অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশও। শুধু রাস্তা নয়, পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডাল মোড়, কাদা রোড মোড়, ভিড়িঙ্গি মোড়, রাজবাঁধ, কাঁকসা-সহ নানা জায়গায় ‘সার্ভিস রোড’ বেহাল, উড়ালপুলগুলি উপযুক্ত নিকাশির অভাবে জলে থইথই করছে, আগাছায় ভরে গিয়েছে

বলে অভিযোগ।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছিল, কয়েকমাস আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু বর্ষা নামতেই পুরনো চেহারা ফিরে এসেছে। ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এই রাস্তা ধরে নিয়মিত যাতায়াতকারী গলসির পলাশ মণ্ডল, বড়শুলের শিক্ষিকা বুলবুল দত্তসিংহ, তাঁতখণ্ডের পারভেজ মইনুদ্দিনদের অভিযোগ, ‘‘দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে হয়। গর্ত তৈরি হওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছে।’’ কলকাতার ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা সঞ্চয়ন বিশ্বাস, দমদমের প্রকৃতিরঞ্জন রানোদের কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যে আসানসোল যেতে হয়। মোটা টাকা টোল দেওয়ার পরেও রাস্তার এ হাল হবে কেন!’’ শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ী সৌমেন সাহার দাবি, ‘‘রাতে গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে বিকট শব্দ হয়। মনে হয়, বোধ হয় বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল!’’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প আধিকারিক স্বপন মল্লিক বলেন, ‘‘রাস্তা সংস্কার চলছে। মাঝেমাঝে বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কোথায় নতুন করে গর্ত হয়েছে, রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, একটি বেসরকারি সংস্থা আসানসোল থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে বাঁ দিকের রাস্তায় পাইপ পুঁতে ছিল। চুক্তি অনুযায়ী, ওই সংস্থা রাস্তা সংস্কার করবে। তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে আলোচনা চলছে। রাস্তার উপরে বিদ্যুৎ-সহ অন্য নানা সংস্থার খুঁটি রয়েছে। সেগুলো সরানো না হলে সার্ভিস রোডের কাজ করা যাচ্ছে না।’’

যত দিন না এ সব কাজ হচ্ছে, এই রাস্তায় প্রাণ হাতে করেই যাতায়াত করতে হবে বলে ধরে নিচ্ছেন যাত্রীরা।

(তথ্য সহায়তা: নীলোৎপল রায়চৌধুরী ও সুব্রত সীট)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন