ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। — ফাইল চিত্র।
কবীর সুমন লিখেছিলেন, ‘হেলিকপ্টার হেলিকপ্টার, নেতা আসছেন নেতা আসছেন!’ অন্য এক কবীর হেলিকপ্টার ভাড়া করে নেতা হয়ে ভাসতে চাইছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন আকাশের গায়ে কান পাতার।
এই কবীর হুমায়ুন। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক (আপাতত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে খড়্গহস্ত বিক্ষুব্ধ) হুমায়ুন কবীর। যিনি প্রতি বছর গড়ে দু’বার করে দলের বিরুদ্ধে সরব হন। আবার গড়ে দু’বার করে মিইয়েও যান। কিন্তু বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে এ হেন হুমায়ুন একটু বেশিই তিরিক্ষি মেজাজে! ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, ২২ ডিসেম্বর তিনি নতুন দল ঘোষণা করবেন। তাঁর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদে ঘুরবেন গাড়ির কনভয় নিয়ে। আর রাজ্যের বাছাই করা জেলায় ঘুরবেন হেলিকপ্টারে।
হেলিকপ্টার? সে তো বিপুল খরচ? প্রশ্ন শুনে ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন একদা কংগ্রেস, তার পরে বিজেপি ঘুরে তৃণমূলে যোগ দেওয়া হুমায়ুন। তাঁর কথায়, ‘‘হেলিকপ্টারে কত খরচ হয় আমার জানা আছে।’’ কত খরচ? হুমায়ুন বললেন, ‘‘ভোটের সময়ে ১০ দিন যদি আমি হেলিকপ্টার ভাড়া করি, তবে মেরেকেটে দৈনিক ৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে। মোট ৩০ লক্ষ টাকা। যে পার্টি তৈরি হবে, তার প্রার্থী থাকবে, নেতৃত্ব থাকবেন, সে পার্টির তরফে এইটুকু খরচ করা যাবে না?’’
মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং দুই ২৪ পরগনার মতো গোটা ছয়েক জেলার বাছাই কিছু এলাকায় হেলিকপ্টার সফরে যেতে চান হুমায়ুন। সরাসরি বলেননি। তবে ইঙ্গিতে স্পষ্ট, তিনি সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে বার্তা দেবেন। কেন ওয়াকফ আইন নিয়ে বঙ্গে সংখ্যালঘুদের আন্দোলন করতে দেওয়া হল না, সেই প্রশ্ন তুলবেন। এ-ও বলে রেখেছেন, নির্বাচন কমিশনে সব কাজ গোছানো হয়ে গিয়েছে। নতুন দলের চেয়ারম্যান হচ্ছেন তিনি।
উল্লেখযোগ্য, হুমায়ুন ক্রমাগত নতুন দল ইত্যাদির কথা বলে গেলেও তৃণমূল তাতে কোনও পাত্তাই দিচ্ছে না। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছে না? হুমায়ুন বলছেন, ‘‘সেটা দল জানে।’’ আর দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলছেন, ‘‘যিনি অন্য পথের পথিক হয়ে গিয়েছেন, তাঁকে গুরুত্ব দিয়ে কী লাভ?’’
মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে হুমায়ুন দীর্ঘ দিনের নাম। এ হেন হুমায়ুন গত পাঁচ বছরে কত বার যে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই! তাঁর ঘনিষ্ঠেরাও একান্ত আলোচনায় মানেন, তিনি যতটা গর্জান, সবসময় ততটা বর্ষান না। এই যে নতুন দল গড়া, হেলিকপ্টার ভাড়া করার প্রস্তুতির কথা বলছেন, তাকে অনেকেই ‘ডানা ঝাপটানো’ হিসাবে দেখছেন। তিনি আদৌ কপ্টারে চেপে উ়ড়বেন কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই।
ভোটের বাংলায় আকাশে পাখির মতো হেলিকপ্টার ওড়া গত কয়েক বছরের পরিচিত দৃশ্য। হুমায়ুন মনে করাচ্ছেন, দুর্বল হয়ে যাওয়া কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীও হেলিকপ্টারে প্রচার করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারীরা তো আছেনই। ফলে তিনিও হেলিকপ্টার ভাড়া করতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করবেন কি? সুমন কবীরের মতো হুমায়ুন কবীরের গানেও প্রশ্ন আছে— হেলিকপ্টার হেলিকপ্টার, নেতা আসবেন? নেতা আসবেন?