তিনি মমতার ভক্ত ‘হনুমান’, বলছেন মদন

কুণাল ঘোষ হতে চান না তিনি। বরং থাকতে চান হনুমান হয়ে। এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডের ২০ নম্বর কেবিনে শুক্রবার দিনভর তিনি মহা অস্বস্তিতে। বিরক্তও।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

কুণাল ঘোষ হতে চান না তিনি। বরং থাকতে চান হনুমান হয়ে।

Advertisement

এসএসকেএম-এর উডবার্ন ওয়ার্ডের ২০ নম্বর কেবিনে শুক্রবার দিনভর তিনি মহা অস্বস্তিতে। বিরক্তও।

কারণ বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে তাঁরই জামিন চেয়ে সওয়াল করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নাম টেনে এনেছেন তাঁর কৌঁসুলি মিলন মুখোপাধ্যায়। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে ফিসফাস— কুণাল ঘোষের মতো কি এ বার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগতে চলেছেন সারদা কাণ্ডে ‘জেলবন্দি’ পরিবহণমন্ত্রীও? রাত পর্যন্ত এই জল্পনায় বেজায় বিব্রত মন্ত্রী। আর তাই এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘রামের যেমন হনুমান, তেমনই মমতার মদন।’’

Advertisement

শুক্রবার দিনভর ঘনিষ্ঠ অনুচরদের সামনে কোনও ভূমিকা ছাড়াই বারবার ওই ‘অস্বস্তিকর’ প্রসঙ্গটা টেনে এনেছেন মদন মিত্র। বোঝাতে চেয়েছেন, সংবাদমাধ্যমে যা বেরিয়েছে, তা ঠিক নয়। তিনি রণক্ষেত্রে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। আর এই যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁর সেনাপতি। তাঁর আইনজীবী যা বলেছেন, সেটা তাঁর ‘মুখ ফসকে’ বলে ফেলা। এটা ‘মদন মিত্রের ভাবনা’ নয়। তিনি তা মনেও করেন না।

কী বলেছিলেন মদনের আইনজীবী?

বৃহস্পতিবার মদনের জামিনের শুনানিতে সিবিআই-কে দেওয়া আশরাফুল হক নামে সারদা-মামলার এক সাক্ষীর জবানবন্দির কথা তোলেন মিলনবাবু। তিনি বলেন, আশরাফুল তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তিনি সারদার অফিসে গিয়ে মদন মিত্রের নাম দেখে প্রভাবিত হয়ে সেখানে টাকা রেখেছিলেন। ‘কলম’ পত্রিকার উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেও প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি। এই কথা বলে মদনের কৌঁসুলি দাবি করেন, ‘‘সাক্ষীদের জবানবন্দিতে মদন ছাড়াও আরও অনেকের নাম রয়েছে। তা হলে শুধু মদন মিত্রই জেলে কেন?’’

তাঁর আইনজীবীর এই বক্তব্য নিয়েই ঘনিষ্ঠ মহলে মদন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘আইনজীবী হোন বা রাজনৈতিক নেতা, অনেক সময়েই তাঁদের তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দিতে হয়। তখন সব শব্দ খেয়াল রেখে বক্তৃতা করা যায় না। অনেক সময়েই ভুল হয়ে যায়। আমাদেরও হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। তবুও আমার আইনজীবীর বক্তব্যে যদি কেউ আঘাত পান, তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’

প্রশ্ন হল, কেন এত বিচলিত একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ পরিবহণমন্ত্রী?

মন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর কথায়, ‘‘দিদির দয়ায় এখনও দাদা মন্ত্রী থেকে গিয়েছেন। তাঁর আশীর্বাদ আছে বলেই দাদা দিনের পর দিন এসএসকেএমে রয়েছেন। এই অবস্থায় আইনজীবীর মন্তব্যে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দাদাও।’’ এমনিতে গত মাসে এক বার মেজাজ হারিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী নিজেই। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জামিন না পেয়ে বলেছিলেন, ‘‘দলনেত্রীর উপরে আস্থা রাখার ফল পাচ্ছি। সবাই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমি জেলে পচছি।’’

আজ সেই তিনিই চরম সাবধানী। সংশয়ী। নিন্দুকরা যাকে বলছেন, ‘মন্ত্রিত্ব ও হাসপাতাল-বাসের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে ভাবনা। অবশ্য ভিজিটিং আওয়ারে হাসপাতালে থাকা নিয়ে কথা উঠতে মদন এক জনকে বললেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে আর ডাক্তারদের পরামর্শে এখানে আছি। ওঁরা বললে চলে যাব।’’

সত্যিই কি তা-ই? পরে এক অনুচর কিন্তু বললেন, ‘‘এমনিতেই কুকুর-কাণ্ড নিয়ে এসএসকেএমে ডামাডোল। তার উপরে সরকার হাত তুলে নিলে আখেরে ক্ষতি দাদারই।’’

আর তাই তিনি হনুমান। অবশ্য রামভক্ত নন, মমতাভক্ত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন