গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
‘অন্য যে কারও আগে’ দেশবাসী জানুক! এবং দেশবাসীকে জানানোর জন্যই এ বার সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সন্ত্রাসবাদের নেপথ্যে পাকিস্তানের ভূমিকার কথা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে দেশে দেশে ঘুরছে ভারতের বহুদলীয় প্রতিনিধিদল। তার মধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে যাতে দেশবাসী জানতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সংসদের বিশেষ অধিবেশন চাইলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা।
শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলে মমতা লিখেছেন, ‘‘আমি কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, প্রতিনিধিদল নিরাপদে দেশে ফিরে আসার পরে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক।’’ এর পরেই মমতা লিখেছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, সংঘাত এবং তার পরবর্তী ঘটনাপরম্পরার বিষয়ে দেশবাসীর জানার অধিকার রয়েছে— অন্য যে কারও আগে।’’
এই ‘অন্য কেউ’টা কে? সে সম্পর্কে মমতা পোস্টে কোনও ব্যাখ্যা দেননি। তবে যে ভাবে তিনি ইংরেজি ‘ক্যাপিটাল’ হরফে ‘বিফোর এনিওয়ান এল্স’ (অন্য যে কারও আগে) লিখেছেন তা দেখে অনেকের অভিমত, ভারত-পাক সংঘাতের আবহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন মমতা। ঘটনাচক্রে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কথা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্পই। এ-ও বলেছিলেন, তিনিই দুই দেশকে বলেছেন, সংঘাত বন্ধ না-করলে বাণিজ্য বন্ধ করবে আমেরিকা। তার পর দু’দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। মমতা তাঁর পোস্টে স্পষ্টই দাবি তুলেছেন, বিশেষ অধিবেশন ডেকে দেশবাসীকে সবটা জানানো হোক। যদিও এটিকে তিনি ‘আর্জি’ হিসাবেই উপস্থাপিত করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্স পোস্ট।
তৃণমূলনেত্রীর পোস্টকে রিপোস্ট করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, অভিষেকও বিশ্বের দরবারে প্রতিনিধিত্ব করতে জাপান-সহ পাঁচটি দেশের সফরে রয়েছেন। মমতা লিখেছেন, ‘‘বিশ্ব দরবারে ভারতের বহুদলীয় প্রতিনিধিদল যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের স্বরূপ তুলে ধরছে, তা দেখে আমি খুশি। আমি আগেই বলেছি, জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার যে অবস্থান নেবে, দল হিসাবে তৃণমূল সরকারকে সমর্থন করবে।’’
এর আগে কংগ্রেসের তরফে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস ছাড়াও শরদ পওয়ারের এনসিপি, তেজস্বী যাদবের আরজেডি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (ইউবিটি)-র পাশাপাশি সিপিআই, সিপিএমের মতো বিজেপি-বিরোধী দলগুলিও সংসদের বিশেষ অধিবেশন চেয়েছিল। ভারতের বহুদলীয় প্রতিনিধিদলগুলি যখন বিদেশে সফরে রয়েছে, সেই পর্বে একই দাবি তুললেন মমতা।
এই পর্বে মমতা জাতীয় স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করলেও তাঁর নিজের দলের বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ তিনি মানেননি। কেন্দ্রীয় সরকার মমতা তথা তৃণমূল নেতৃত্বকে না-জানিয়ে প্রতিনিধিদলে বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের নাম চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু তৃণমূল ইউসুফকে দিয়ে নাম প্রত্যাহার করিয়ে নেয়। তৃণমূল স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, দলের তরফে কে যাবেন, তা দলই ঠিক করবে। অন্য কেউ নয়। এমন চাপ তৈরি হয় যে, কেন্দ্রীয় আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু নিজে মমতাকে ফোন করেন। তার পর মমতা অভিষেকের নাম মনোনীত করেন। সেই প্রতিনিধিদল যখন দেশে দেশে ঘুরছে, অন্যরা যখন ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া-সহ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন, তখন সংসদের বিশেষ অধিবেশন চাইলেন তৃণমূলনেত্রী।