সবক বা সহবত শেখানোর কাজটা যে ঘর থেকেই শুরু করতে হয়, সেটা ভালই বুঝেছে রাজ্য সরকার। তাই বাইরে অভিযান চালানোর আগে ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
‘বাইরে’ মানে বেসরকারি স্কুল। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শায়েস্তার রাস্তা নেওয়ার পরেই অতিরিক্ত ফি নেওয়ার ব্যাপারে ওই সব স্কুলের একাংশকে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তার ভিত্তিতেই এ বার বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। তবে তার আগে ঘর গোছানো জরুরি, বিলক্ষণ বুঝেছে সরকার। তাই যে-সব সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি (বছরে ২৪০ টাকার বেশি) নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। এই কাজে জড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিকেই। অর্থাৎ যে-সব স্কুল বেশি টাকা নেয়, নিজেদের নামটা তালিকায় তুলে দিয়ে সেটা স্বীকার করে নিতে হবে তাদেরই!
আরও পড়ুন:ছাত্রদের কাঁধে ইট, প্রধান শিক্ষককে শো-কজ
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে নির্দেশ পৌঁছেছে, যে-সব স্কুল পড়ুয়াদের কাছ থেকে ২৪০ টাকার বেশি নিচ্ছে, তারা অবিলম্বে স্কুল পরিদর্শকের অফিসে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করুক। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু শুক্রবার বলেন, ‘‘আগে দেখি, কোন কোন স্কুল (অত্রিক্ত টাকা) নেয়। তার পরে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটা স্থির করা হবে।’’
ওই দফতর সূত্রের খবর, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক। কিন্তু রাজ্য সরকারের ২০১১ সালের নির্দেশ অনুযায়ী স্কুল চালানোর জন্য কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের কাছে থেকে সর্বোচ্চ ২৪০ টাকা স্কুল নিতে পারেন। আর ১৯৯৩ সালের নিয়ম অনুযায়ী শহরাঞ্চলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া-প্রতি ৭৫ টাকা নেওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে নেওয়া যায় ৬৩ টাকা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক স্কুল বিভিন্ন খাতে অনেক বেশি টাকা নিয়ে চলেছে। লাইব্রেরি ফি, ল্যাবরেটরি ফি, ইলেক্ট্রিক ফি-এর মতো বেশ কিছু খাতে টাকা নেওয়া হয়।
অনেক প্রধান শিক্ষকে বক্তব্য, পড়ুয়াদের থেকে মাথাপিছু ২৪০ টাকা নিয়ে স্কুল চালানো প্রায় অসম্ভব। বিদ্যুতের বিল স্কুলকে মেটাতে হয়। বাইরে থেকে কম্পিউটারের শিক্ষক রাখতে হয় অনেক স্কুলকে। স্কুলের নৈশ প্রহরী, ঝাড়ুদারদের খরচও বহন করতে হয় স্কুল-কর্তৃপক্ষকেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘‘এখন যা অবস্থা, তাতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অতিরিক্ত টাকা নিতেই হয়।’’ কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, অনেক সময় পড়ুয়াদের নামে টাকা না-নিয়ে অভিভাবকদের নামে ডোনেশন হিসেবে কিছু নেওয়া হয়।