দুর্নীতি করলে ভোট পাই কেন, প্রশ্ন আব্বাসের

রাজারহাটের নিউটাউনে ট্রাফিক পুলিশকে ‘জানেন আমি কে’ বলে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছিল। এমন ‘অভ্যাস’ তাঁর সেই ছাত্রবেলার— বলছেন উলুবেড়িয়ার প্রবীণ নেতারা। এখন তিনি উপ-পুরপ্রধান। সম্প্রতি তোলাবাজির অভিযোগে ধমক খেয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০১:৫৮
Share:

অগ্রগতি: পাঁচ মাসের কাজের হাল এমনই। ইনসেটে তৃণমূল নেতা আব্বাসউদ্দিন খান। ছবি: সুব্রত জানা

নিয়ম ভেঙে গাড়ি চালিয়ে পুলিশের উপরই তম্বি করেছিলেন তিনি। রাজারহাটের নিউটাউনে ট্রাফিক পুলিশকে ‘জানেন আমি কে’ বলে হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছিল। এমন ‘অভ্যাস’ তাঁর সেই ছাত্রবেলার— বলছেন উলুবেড়িয়ার প্রবীণ নেতারা। এখন তিনি উপ-পুরপ্রধান। সম্প্রতি তোলাবাজির অভিযোগে ধমক খেয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

Advertisement

আব্বাসউদ্দিন খান অবশ্য তৃণমূলের সব থেকে বেশি ভোটে জেতা কাউন্সিলর। গত লোকসভা উপনির্বাচনেও উলুবেড়িয়া পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে তাঁর ২৪ নম্বরেই সব থেকে বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমেদ। বিরোধীরা বলেন, ‘‘আব্বাসের রিগিংয়ের সামনে দাঁড়ায় কে!’’

রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ছাত্র পরিষদের ছাতার নীচে। উলুবেড়িয়া কলেজের কাছেই তাঁর পৈতৃক বাড়ি। ১৯৯১-৯২ সালে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ সালে কাউন্সিলর হিসাবে প্রথম নির্বাচিত হওয়ার আগে পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করেছেন। তবে তারপরও ছাড়েননি কলেজের চৌহদ্দি। প্রত্যক্ষ ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেও কলেজের সঙ্গে ওতপ্রত জড়িত তিনি। এমনকি কাউন্সিলরের অফিসঘরটিও এখন সেই কলেজের কাছেই। পৈতৃক ভিটে ছেড়ে আব্বাস এখন থাকেন এক আবাসনে। সেটিও কলেজের উল্টো দিকে।

Advertisement

তৃণমূল কর্মীদের একাংশই বলছেন, পুরপ্রধানের থেকে আব্বাসউদ্দিনের দাপট এলাকায় অনেক বেশি। পুরসভার নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এমন করে আসছেন তিনি। কোথাও বেআইনি কাজ হলেই ভয় দেখিয়ে সুবিধা আদায় করে নেওয়া বা ঠিকা সংস্থার কাছ থেকে কমিশন আদায়ের মতো অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। পুরসভায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সমান্তরাল গোষ্ঠী চালানোর গুঞ্জনও রয়েছে।

২০১৫ সালে উপ-পুরপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর সে সব দুর্নীতি মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করছেন কাউন্সিলরদের একাংশ। রাস্তা, শৌচাগার, গরিবের বাড়ি— কোনও কিছুই বাদ পড়ে না উপ-প্রধানের নজর থেকে। যদিও সব অভিযোগ উড়়িয়ে দিয়েছেন আব্বাসউদ্দিন। তাঁর দাবি, ‘‘২০১৫ সালে পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ড-এর মধ্যে সব থেকে বেশি ভোটে জিতেছি আমি। এত দুর্নীতি করলে মানুষ ভোট দেবেন কেন?’’ আব্বাসপন্থী এক তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘দুর্নীতির ঠগ বাছতে গেলে পুরসভা কেন গোটা রাজ্যে উজাড় হয়ে যাবে। আব্বাস গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের শিকার। কেউ মুখ্যমন্ত্রীর কান ভারী করেছে।’’

ছাত্র রাজনীতির সুবাদে এলাকা হাতের মুঠোয় রাখেন বছর সাতচল্লিশের আব্বাস। সংগঠন হোক বা পুরসভার কাজকর্ম পুরপ্রধান অর্জুন সরকার যেন তাঁর সামনে খানিকটা নিষ্প্রভ। ডেঙ্গি সচেতনতা, পচা মাংস, ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান— সদা সক্রিয় উপ-পুরপ্রধান। তৃণমূলের ভিতরে অনেকের মন্তব্য, ‘‘হাসিমুখে সংগঠন করা আব্বাস ক্ষমতা পেয়ে লোভ নিয়ন্ত্রণে করতে পারল না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন