বরুণবাণ ভোঁতা করে মহাষ্টমীতে বিরাট ছক্কা উৎসাহী ভিড়ের

ইনদওরে কোহালির ডবল সেঞ্চুরি, রাহানের প্রায়-ডবল। আর বাংলায় ঘূর্ণাসুরকে বেদম পেটাল উৎসবমুখর জনতা। বন্যা বয়ে গেল চার-ছয়ের। বঙ্গোপসাগরের দস্যু নিজেই যেন লেজেগোবরে! খাস বাংলায় এখনও ঢোকেনি সে। পড়শি রাজ্য ওড়িশা থেকেই মহোৎসবে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে ঘূর্ণাসুর।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৫
Share:

কুমারী পুজো। রবিবার মহাষ্টমীতে বেলুড় মঠে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

ইনদওরে কোহালির ডবল সেঞ্চুরি, রাহানের প্রায়-ডবল।

Advertisement

আর বাংলায় ঘূর্ণাসুরকে বেদম পেটাল উৎসবমুখর জনতা। বন্যা বয়ে গেল চার-ছয়ের। বঙ্গোপসাগরের দস্যু নিজেই যেন লেজেগোবরে!

খাস বাংলায় এখনও ঢোকেনি সে। পড়শি রাজ্য ওড়িশা থেকেই মহোৎসবে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে ঘূর্ণাসুর। হয়তো ভেবেছিল, তাতেই কাজ হবে। ভয় পেয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়বে পুজোপাগল জনতা।

Advertisement

কোথায় কী! মা যদি মহিষাসুরের ভবলীলা সাঙ্গ করেন তো ঘূর্ণাসুরের ভয়ে ছেলেমেয়েরা পিছু হটবে কেন? হটেওনি। মেঘ-বৃষ্টি-ভ্যাপসা গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লোকজন সকাল থেকেই পথে। ঘূর্ণাসুরের বরুণবাণ ব্যর্থ। দু’পক্ষের জব্বর লড়াইয়ে তুঙ্গে উঠেছে মহাষ্টমীর মাতন।

দেবীর প্রতিদ্বন্দ্বী অসুর মহিষের পেটে লুকিয়ে নাম নিয়েছে মহিষাসুর। আর বঙ্গোপসাগরের আঁতুড়ে জন্মানো ঘূর্ণাবর্ত এখন রীতিমতো ঘূর্ণাসুর। উপগ্রহ-চিত্র জানাচ্ছে, রবিবার সে ছিল ওড়িশার উপরে। তার দাপটেই উৎসবে ঝামেলা পাকাচ্ছে বৃষ্টি।

সপ্তমীতে উত্তর কলকাতায় মেঘের হামলা ছিল জোরালো। সকালটাই মাটি করে দিয়েছিল বৃষ্টি। সন্ধ্যার পরে অবশ্য মানুষের জেদের কাছে হার মেনেছিল বর্ষণ। অষ্টমীর সকালে রোদ মেলেনি। মহাষ্টমীর অঞ্জলির সময়েই দক্ষিণে টানা এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে মানুষ নাজেহাল। পুজোর উদ্যোক্তারা বুঝতেই পারছিলেন না, কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।

মহালয়া থেকে পঞ্চমীর রাত পর্যন্ত মানুষকে ভুগিয়েছে প্রবল যানজট। ষষ্ঠী থেকে সান্ধ্য যানজটকে কব্জা করে ফেলেছিল পুলিশ। কিন্তু বৃষ্টি আর ধর্মীয় মিছিলের জেরে ভুগতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। সপ্তমীতে সমস্যা বেশি ছিল দক্ষিণে। রবিবার দুপুরের পরে আটকে যায় গোটা মধ্য কলকাতাই। মহম্মদ আলি পার্ক, কলেজ স্কোয়ার, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো না-দেখেই ফিরে যেতে বাধ্য হন অনেকে। পুলিশ যেখানে-সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে হয় রাস্তা আটকে দিয়েছে, নয়তো বাস ঘুরিয়ে দিয়েছে অন্য রুটে। দুপুরের যানজট কাটতে না-কাটতেই সন্ধ্যায় অবশ্য মানুষের ঢল রাস্তায়। ঘূর্ণাসুর ও পুলিশ দু’পক্ষই তত ক্ষণে কাবু।

আসলে এই সব বাধাকে কোনও নম্বর দিতে রাজি নয় পুজোপাগল বাঙালি। এমনই এক বঙ্গতনয়া রিয়া ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘হাবুডুবু অবস্থা না-হলে পুজোয় আমাদের আটকানো মুশকিল।’’ দুই পুত্র আর দুই কন্যাকে নিয়ে মণ্ডপের পর মণ্ডপ কেমন আলো করেছেন দেবী, দেখতে দুই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন গৃহবধূ অনিন্দিতা ভট্টাচার্য। ভিড়ের পায়ে পা মিলিয়ে লেক টাউন, দমদম পার্ক...। অক্লান্ত পরিক্রমা। তাঁকে বা তাঁর মেয়েদের দমাতে পারেনি বৃষ্টি।

মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় বাগবাজারে দাঁড়িয়ে ডিউটি করছিলেন এক পুলিশ অফিসার। তিনি বললেন, ‘‘বৃষ্টি কী করবে! দেখুন না, দলবদ্ধ মানুষ যেন ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে! সামলাতে কালঘাম ছুটছে।’’ উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে জনস্রোত নামছে অন্তত তিনটি ধারায়। একটা নিরবচ্ছিন্ন স্রোত তেলেঙ্গাবাগান করবাগান হয়ে হাতিবাগান ঘুরে ভিড় ঢুকছে কুমোরটুলি-আহিরীটোলা-শোভাবাজারে। অন্য একটা তরঙ্গ চলে যাচ্ছে শ্রীভূমি, লেক টাউন, কালিন্দীর দিকে। আর তৃতীয় স্রোত সোজা ধরছে সল্টলেকের পথ।

বিকেল হতেই শহরতলির জনতা দলে দলে ঢুকতে শুরু করে লেক টাউন-দমদম পার্কে। ওখানে একটি বড় পুজোকে ঘিরে যানজট হচ্ছে মহালয়ার আগের দিন থেকেই। তার জন্য ওই পুজো কমিটির থেকে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকেই বেশি দুষছেন মানুষ। শ্রীভূমিতে পুরীর মন্দির দেখে ভিড়টাই ঢুকছে লেক টাউন, দমদম পার্ক, কালিন্দীতে।

বৃষ্টিতে মণ্ডপের সামনে জল জমেছে। কোথাও কোথাও সিলভার স্যান্ড ফেলে সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রদীপ সঙ্ঘ-নতুন পল্লির উদ্যোক্তারা পড়েছেন মহাসমস্যায়। জমা জলের তোয়াক্কা না-করে দুপুরেই মণ্ডপে এত মানুষ ঢুকে পড়েছেন যে, বালি ফেলার সুযোগ মিলছে না। দমদমের ভিড়ের একটা বড় অংশ ঢুকছে টালা পার্কে। আস্ত সুন্দরবন উঠে এসেছে সেখানে। সোঁদরবনের বাঘ-টাগ দেখে ভিড় ছুটছে হাতিবাগানের দিকে। মেঘ ডাকছে ডাকুক। ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। ‘‘বৃষ্টির আসার আগেই সব শেষ করতে হবে। আজ উত্তর ও মধ্য কলকাতা। সোমবার আমাদের টার্গেট দক্ষিণ কলকাতা আর বেহালা,’’ হাতে তালিকা নিয়ে মণ্ডপ মেলাতে মেলাতে পরিকল্পনা জানালেন বলাগড়ের সুব্রত জানা।

ঘূর্ণাসুর হাল ছেড়ে দিয়েছে ভাবলে ভুল হবে। আবহবিদদের আশঙ্কা, আজ, সোমবার মহানবমীতেই ওড়িশা ছেড়ে সে ঢুকতে পারে পশ্চিমবঙ্গে। অর্থাৎ পুজোপাগলদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও এক প্রস্ত লড়াই।

ঘূর্ণাসুরের পেস আর গুগলিতে বাঙালি বোল্ড হবে, নাকি সোজা ব্যাটে চার-ছয় হাঁকাবে, তার উত্তর লুকোনো আছে মহানবমীর ঝোলায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন