পরিবেশ-বান্ধব শহর গড়ার অভিনব উপাদান আবিষ্কার খড়গপুর আইআইটির

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বেড়ে চলেছে শহরগুলো। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যের সমস্যা। নগরায়নের এই সব সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজছে আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক, গবেষকেরা। প্রকল্পের নাম ‘ফিউচার ইন সিটি’।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:১১
Share:

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বেড়ে চলেছে শহরগুলো। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যের সমস্যা। যার ফলে কখনও তীব্র গরমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে শহরবাসীর। কখনও-বা আবার তাঁরা উঁচু বহুতলে জল পাচ্ছেন না। এই সব সমস্যা নিয়ে চিন্তায় বিজ্ঞানী থেকে সরকারী দফতর সকলেই।

Advertisement

ভারত সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, অর্থনৈতিক সংস্কার ও দ্রুত বৃদ্ধির ফলে ভারতে দ্রুত হারে শহর, তার পরিধি বাড়িয়ে চলেছে। ভারত সরকারের জন সমীক্ষা অনুসারে, তিরিশ লক্ষ মানুষ শহরে বাস করেন। আর এই বেড়ে চলা শহরের গতিই বাড়িয়ে দিচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা। এমনটাই মত পরিবেশবিদদের।

নগরায়নের এই সব সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজছে আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক, গবেষকেরা। প্রকল্পের নাম ‘ফিউচার ইন সিটি’। তাঁরাই আবিস্কার করলেন এক অভিনব উপাদান। যার ব্যবহারের ফলে একাধারে মাটির তাপমাত্রা বাড়বে না আবার ভূতলের জলের পরিমাণও কমবে না। প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র জানান, ‘‘৬৯ জন অধ্যাপক পরিবেশ বান্ধব শহর গড়ে তোলার জন্য অবিরত পরিশ্রম করছেন।’’ খড়গপুর আইআইটির এই প্রকল্প এর আগেও সাফল্য পেয়েছে। কিছু দিন আগেই এই প্রকল্পের অধীনস্থ অপর একটি প্রকল্প ‘সন্ধি’, কলকাতা শহরের বই পাড়ার সমস্যা সমাধানের জন্য নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে। অধ্যপক মৈত্র আরও বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ভারতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা শহরগুলিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে গড়ে তোলা। বিশেষত কলকাতা শহরের মতো বড় শহরে যেখানে যানজট এটা রোজকার সমস্যা সেটা নিয়ে বিশেষ করে ভাবছে এই প্রকল্প।’’

Advertisement

আইআইটি খড়গপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই উপাদানটি ৭০ শতাংশ সিমেন্ট ও ৩০ শতাংশ পাথর দিয়ে তৈরী। পাথরের ব্যবহারের জন্যই তাপমাত্রা কমাতে সক্ষম হবে এই উপাদান, বলে দাবি করছেন গবেষকদলের প্রধান কৃষ্ণ প্রাপরনা বিলিগিরি। তিনি আরও জানান, ‘‘এই উপাদানে আরও একশো ধরনের পাথর ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। কারণ, ভারতের বিভিন্ন জায়গার ভূপ্রকৃতি যেহেতু আলদা আলাদা। তাই একই রকম পাথর উপাদানে ব্যবহার করলে, উপাদান তৈরিতে খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’

ইতিমধ্যেই এই উপাদানের ব্যবহার নিয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন দফতর ও সড়ক উন্নয়ন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছে। আইআইটির ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী জানান, ‘‘ভারতকে পরিবেশ বান্ধব উপাদানে তৈরী করাই আমাদের স্বপ্ন।’’ আইআইটি খড়গপুরের এই প্রচেষ্টা যে ভারতের পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্য মেটাতে অনেকটাই সক্ষম হবে এমটা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিদ্যা বিভাগও। বিভাগীয় প্রধান দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ‘‘এই ভাবনা দীর্ঘদিনের একটা পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাকে সমাধান করবে।’’ এই উপাদানটি তৈরী হয়ে যাওয়ায় তাঁরা যে খুবই খুশি এমনটাই জানাচ্ছেন দীপঙ্করবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন