কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ন্যাশনাল জুট ম্যানুফ্যাকচারার্স কর্পোরেশনের (এনজেএমসি) বন্ধ হয়ে যাওয়া চটকলগুলির জমি এবং দেদার যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে দিল্লি থেকে সচিবস্তরে রাজ্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। পুলিশকে বার বার জানানো হয়। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি নবান্ন বা পুলিশ কোনও স্তরেই।
এনজেএমসি-র মোট ছটি বন্ধ চটকলের মধ্যে বর্তমানে তিনটি চালু করা হয়েছে। এগুলি হল উত্তর ২৪ পরগণার কিন্নিসন ও খড়দহ জুট মিল এবং বিহারে কাটিহারের রায় বাহাদুর হরজোট মিল। বন্ধ কারখানাগুলি হল শিয়ালদহের কনভেন্ট রোডে ইউনিয়ন জুট মিল, সাঁকরাইলে ন্যাশনাল জুট মিল এবং জগদ্দলে আলেকজান্ডার জুট মিল।
তিনটি কারখানা থেকেই ব্যাপক ভাবে চুরি চলছে। তবে সবচেয়ে করুণ অবস্থা শিয়ালদহের কারখানাটির। এনজেএমসি-র সিএমডি কুশল ভাদুড়ি জানান, এই সংস্থার কারখানাগুলি রুগ্ণতার কারণে বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে শিয়ালদহের কারখানাটির প্রায় দেড়শ কোটি টাকা দামের জমি ঝুপড়ি, মন্দির, খেলার মাঠ ইত্যাদি করে জবরদখল করা হয়।
কুশলবাবু বলেন, ‘‘আমি গত জানুয়ারি মাসে সিএমডি-র দায়িত্ব নিই। তার পরে বন্ধ কারখানাগুলি পরিদর্শন করে মনে হয়েছিল অনেক যন্ত্র উধাও হয়ে গিয়েছে। তাই গত জুন মাসে শিয়ালদহের কারখানাটির ভিতরে কী অবস্থা তার ভিডিও তুলে রাখার ব্যবস্থা করি। গত ৩১ অগস্ট কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার বন্ধ কারখানাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে অচল যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান। এর পর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে আমরা একটা খবর পেয়ে কারখানায় গিয়ে দেখি, বাইরের পাঁচিল ভেঙে লরি ঢুকিয়ে কারখানায় বড় মাপের চুরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিক্রির কথা ঘোষণা করার পর যেন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পাঁচিল ভেঙে, লরি ঢুকিয়ে, গ্যাসকাটার ব্যবহার করে লুঠ করা হয়।’’
চলতি মাসের ৮ তারিখ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এসে কারখানাটি পরিদর্শন করে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে যান। তিনি বলেন, ‘‘রীতিমতো সংগঠিত ভাবে পেশাদার লোকেদের দিয়ে লুঠ চলছে।’’এর পর নিরাপত্তা রক্ষীরা লিখিত অভিযোগ করেন, ২৩ নভেম্বর রাতে বিশাল ট্রাক এনে প্রায় জনা পঞ্চাশ সশস্ত্র দুষ্কৃতী ছোটখাটো যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে। তারা বিভিন্ন বড় যন্ত্রপাতি, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে গুছিয়ে নিয়ে চলে যায়। গুটিকয় রক্ষীদের বন্দুকের মুখে দাঁড় করিয়ে কাজ হাসিল করে চলে যায় তারা।’’ সবচেয়ে বড় কথা, পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও এন্টালি থানা থেকে পুলিশ আসতে সময় নেয় এক ঘন্টারও বেশি। তার মধ্যে দুষ্কৃতীরা গোটা কারখানা ফাঁকা করে দিয়ে চলে যায়।
এ ব্যাপারে এন্টালি থানার ওসি অতনু তরফদার বলেন, ‘‘আমরা খবর পাওয়ামাত্র দৌড়ে যাই। তার পর চুরি যাওয়া সব জিনিসই উদ্ধার করা হয়েছে। প্রচুর গ্রেফতারও হয়েছে।’’ কিন্তু এত সংগঠিত ভাবে যারা এরকম লুঠ করল, তারা কারা? এর উত্তরে ওসি-র ত্বরিৎ জবাব, ‘‘ওই সব ড্রাগ অ্যাডিক্টদের কান্ড।’’ কিন্তু এনজেএমসি-র সিএমডি কুশলবাবু বলেন, ‘‘আমরা প্রায় আড়াই কোটি টাকার জিনিসপত্র লুঠ করা হয়েছে বলে এফআইআর করেছিলাম। সেগুলো পাওয়া গেলে পুলিশ তা ফেরৎ দিচ্ছে না কেন? কাদের গ্রেফতার করা হল, তাও জানায়নি পুলিশ।’’
শুধু শিয়ালদহের কারখানাই নয়, সাঁকরাইলে বন্ধ পড়ে ন্যাশনাল জুট মিল থেকেও মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হচ্ছে নিয়মিত। গঙ্গার অপরদিকে মেটিয়াবুরুজ থেকে নদি পেরিয়ে এসে দুষ্কৃতীরা লুঠতরাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
এসব নিয়ে চলতি মাসের তিন তারিখ কেন্দ্রীয় বস্ত্রসচিব সঞ্জয় পন্ডা রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানান। এন্টালি থানাকে বারবার জানিয়েও যে লাভ হচ্ছে না, তা তিনি চিঠিতে বলেন। অবিলম্বে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানানো হয়।
কিন্তু এ পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি বলে জানান এনজেএমসি-র সিএমডি।