ফেলো কুপন, মাখো তেল, জেলে এটাই দস্তুর

শুরু হয়েছিল সেন্ট্রাল জেল দিয়ে। এখন কমবেশি রাজ্যের সব জেলেই তৈরি হয়েছে ক্যান্টিন।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনতে তার প্রয়োজন। আবার তাকে সামনে রেখেই চলে জুয়ার বোর্ড!

Advertisement

ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গের জেলখানা, যার পোশাকি নাম সংশোধনাগার। এখানে বন্দিদের হাতে টাকা দেওয়া যায় না। তাই পরিবর্ত হিসাবে কুপনের রমরমা। এই কুপনই জেলবন্দিদের তুরুপের তাস। যাঁর কাছে যত কুপন, তিনি তত ক্ষমতাবান বন্দি।

শুরু হয়েছিল সেন্ট্রাল জেল দিয়ে। এখন কমবেশি রাজ্যের সব জেলেই তৈরি হয়েছে ক্যান্টিন। সমবায় করে ক্যান্টিন চালাচ্ছেন বন্দিরাই। এখানে বিরিয়ানি থেকে ইডলি, ধোসা— সব পাওয়া যায়। আবার, দামি সাবান, তেল, প্রসাধনী মায় জামাকাপড় ও অন্য জিনিসপত্রও মেলে ক্যান্টিনে। কোনও বন্দি এ সব কিনতেই পারেন। তাঁকে দাম চোকাতে হবে কুপনে।

Advertisement

আরও পড়ুন:ঋতব্রতের নামে এ বার দায়ের ধর্ষণের অভিযোগ

কারা নিয়মে, বন্দিদের বাড়ির লোক জেলের অফিসে টাকা জমা রাখেন। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা। সেটাই কুপন হয়ে পৌঁছে যায় বন্দিদের হাতে। এক, দুই, পঞ্চাশ, একশো টাকা মূল্যের কুপন। জেলের মধ্যে এই কুপনই ‘টাকা’ হয়ে উঠেছে।

এই কুপন দিয়ে খাবার, জামাকাপড় কেনেন বন্দিরা। আবার, শ্রমের বিনিময়ে এই কুপনই হয়ে ওঠে উপার্জনের চাবিকাঠি। কী ভাবে? রাজ্য কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘জেলে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের বন্দির সংখ্যাই বেশি। এই সুযোগটাই নেন জেলবন্দি ধনী ব্যক্তি, মাফিয়া ডন বা বড় অপরাধীরা।’’ ওই কর্তা জানান, এই ক্ষমতাবান বন্দিরা কাপড় কাচা, গা-হাত পা মালিশ করা, নানা রকম ফরমায়েশ খাটার মতো কাজ করিয়ে নেন গরিব বন্দিদের দিয়ে। বদলে ‘মজুরি’ দেন কুপনে। ধনী বন্দিদের থেকে কুপন উপার্জন করে তা ক্যান্টিনে খরচ করেন গরিব বন্দিরা।

কুপনের মূল্য এখানেই শেষ নয়। ওই কর্তা জানাচ্ছেন, একাধিক জেলে নিষিদ্ধ জিনিস কেনাবেচা কিংবা জুয়া খেলা চলে দেদার।
জুয়ায় হারলে মূল্য চোকাতে হয় কুপনেই। আবার, নতুন বন্দিদের থেকে ‘তোলা’ আদায় হয় কুপনের মাধ্যমে।

জেল সূত্রেই খবর, ‘‘বাইরের জগতে যে ভাবে টাকা ছড়িয়ে গোষ্ঠী তৈরি করেন মাফিয়ারা, জেলের অভ্যন্তরেও কুপন ছড়িয়ে নিজস্ব গোষ্ঠী তৈরি করে ক্ষমতাবান বন্দিরা। এই কাজে অনেক ক্ষেত্রে জেলের অফিসারেরাও জড়িয়ে পড়েন।

কুপন নিয়ে বেআইনি কাজকর্ম আটকাতে অবশ্য অনেক চেষ্টা হয়েছে। পুরনো বদলে নতুন কুপন চালু করা হয়েছে ঘনঘন। ‘‘কিন্তু তাতে কোও কাজ হন না’’— বলেন এক জেলকর্তা। অগত্যা দাওয়াই হিসাবে অনেকে বন্দিদের জন্য ‘স্মার্ট কার্ড’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। তাতে বেনিয়ম বন্ধ হবে বলেই তাঁদের ধারনা। ইতিমধ্যে তিহাড়ের মতো দেশের কয়েকটি বড় জেলে স্মার্ট কার্ড চালু হয়েছে। যদিও এক হতাশ কারা-কর্তার মতে, ‘‘স্মার্ট কার্ড হলেও কোনও রন্ধ্রপথ খুঁজে বের করবেন বন্দিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন