জুম্মার নমাজ শেষ। লোকজন এ বার বাড়ি ফিরবেন। ইমাম বললেন, ‘‘ভাই সকল, এট্টু সবুর করুন। জরুরি কথা আছে।’’
শুক্রবার জুম্মার নমাজে বহু লোক আসেন। ইমাম কী বলতে পারেন, তা নিয়ে ডোমকলের রসুলপুরে মসজিদে চাকবাঁধা ভিড়ে মৃদু গুঞ্জন।
ইমাম আহাসান হাসি মাইক্রোফোনে বার দু’য়েক ফুঁ দিতেই চুপ করে গেল ভিড়টা। ইমাম শুরু করলেন, ‘‘গাঁয়ের বহু ছেলেমেয়ে মাধ্যমিক দিচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিকও ক’দিন পরেই। আপনাদের কাছে অনুরোধ, ছেলেমেয়েরা যেন টুকলি না-করে।’’ গলাটা একটু ঝেড়ে আহাসান বলে চলেন, ‘‘টুকলি মানে চুরি। আর চুরি হল গুনাহ্। এটা ছেলেমেয়েদের বুঝিয়ে বলুন।’’
পোলিও খাওয়ানো থেকে বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ, বাল্যবিবাহ রোধ থেকে বার্ড ফ্লু— মুর্শিদাবাদে বারবার পথে নেমেছেন ইমামরা। সচেতন করেছেন লোকজনকে। তবে পরীক্ষায় নকল রুখতে ইমাম মাইক ধরছেন, এমনটা ডোমকল আগে দেখেনি।
রসুলপুরের পাশের গাঁ বিলাসপুর। সেখানকার মসজিদের মোজাফ্ফর খান এই জেলার ইমাম-মোয়াজ্জেম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনিও মসজিদে আসা পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ‘‘টুকলি কিন্তু একেবারেই নয়।’’
এর আগে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ইমামেরা পথে নেমেছেন প্রশাসনের কর্তাদের অনুরোধে। এই দুই ইমাম কিন্তু নিজেরাই টুকলি রুখতে এগিয়ে এসেছেন। বলছেন, ‘‘টিভিতে-কাগজে দেখেছি, কী ভাবে ছেলেরা দেওয়াল বেয়ে উঠে টুকলির কাগজ দিচ্ছে। এ তো ভাল ব্যাপার নয়! আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে এ সব না করে, আমরা সেই অনুরোধই করছি।’’
মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের আগে বহু পরীক্ষার্থীই দোয়া নিতে আসে মসজিদে। তাদেরও ইমামেরা বুঝিয়ে বলছেন। বিলাসপুরের ইউনুস আলি, রসুলপুরের আব্দুল আজিজ বিশ্বাসেরা বলছেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের ভাল ভাবে লেখাপড়ার কথা বলি। এ বার টুকলি নিয়েও সতর্ক করব।’’
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাজিদুর রহমান কিংবা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শামসুল হকেরা বলছে, ‘‘যারা ঠিক মতো পড়াশোনা করে, তাদের টুকলি করার দরকার নেই। ইমামেরা সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন।’’