এ রাজ্যে চাষির মৃত্যু হলেই ২ লক্ষ দেবে সরকার, ঘোষণা মমতার

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রকল্পের জন্য সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। অন্য জায়গা থেকে খরচ কমিয়ে এই কাজ করবে সরকার।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৩
Share:

বছরের শেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, এ রাজ্যে কোনও কৃষকের মৃত্যু হলেই সরকার ২ লক্ষ টাকা অর্থ সাহায্য করবে।— পিটিআই।

দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের অসন্তোষ যখন মাথা চাড়া দিয়েছে, তখন কৃষকদের জন্য কার্যত কল্পতরু হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, বছরের শেষ দিনে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, এ রাজ্যে কোনও কৃষকের মৃত্যু হলেই সরকার ২ লক্ষ টাকা অর্থ সাহায্য করবে। স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক— মৃত্যু যে ভাবেই হোক, এটাই হবে সাহায্যের পরিমাণ। পাশাপাশি কৃষিকাজের জন্য এক-এক জন চাষিকে বছরে পাঁচ হাজার টাকা সাহায্যও দেবে রাজ্য। দুই সুবিধাযুক্ত এই প্রকল্পের নাম মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন ‘কৃষকবন্ধু’। লোকসভা নির্বাচনের বছর শুরুর মুখে মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

এই কর্মসূচি ঘোষণা করে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের ক্ষমতা সীমিত। দেনা শোধ করতে বেশির ভাগ টাকাই চলে যায়। নতুন স্বপ্নের ভোরের জন্য টাকার সমস্যা মোকাবিলা করেই দু’টো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষকদের জীবনের নিশ্চয়তা তাঁদের জমি। অনেকে অল্প বয়সেই মারা যান। তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে না। অভাব সত্ত্বেও নিশ্চয়তা দিতে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের।’’

‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের আওতায় ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কোনও কৃষক বা খেতমজুরের হঠাৎ মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে। আজ, মঙ্গলবার থেকেই এই প্রকল্প কার্যকর করা হবে। তবে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিজেপির টিকিটে বাংলায় প্রার্থী বলিউডের একঝাঁক? মুম্বইয়ে বৈঠকের পর জোর জল্পনা

পাশাপাশি, প্রতি একর জমি চাষের জন্য দু’দফায় বছরে মোট পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কারও জমির পরিমাণ এক একরের কম হলে তুলনামূলক হিসেব করে অর্থ সাহায্য করবে রাজ্য। এই সুবিধাও কার্যকর হবে জানুয়ারি মাস থেকে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রকল্পের জন্য সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। অন্য জায়গা থেকে খরচ কমিয়ে এই কাজ করবে সরকার।’’

কৃষক-কল্যাণ

• কৃষি বিমার প্রিমিয়ামের প্রায় ৮০ শতাংশ দিত রাজ্য। এ বার পুরো প্রিমিয়াম দিয়ে নিজস্ব বিমার প্রস্তুতি
• প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফসলের ক্ষতিতে ৬৩ লক্ষ কৃষককে মোট ২৫০০ কোটি
• ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে কৃষকদের বার্ধক্য ভাতা
• ৪ লক্ষের বেশি চাষিকে যন্ত্রাংশ কিনতে অর্থ সাহায্য
• যন্ত্রের ভাড়া বাবদ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের জন্য ১৬০০ কোটি টাকা
• চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কেনা। সঙ্গে সঙ্গে চেকে টাকা
• কৃষিজমি মিউটেশন ফি মকুব
• অনলাইনে সহজে মিউটেশন

কিন্তু আয়ের ঊর্ধ্বসীমা না-রেখে কৃষকদের ক্ষেত্রে যে ভাবে ঢালাও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তাতে অন্য পেশার লোকদের জন্যও অনুরূপ দাবির ক্ষেত্র তৈরি হল কি না, অনেকে সেই প্রশ্ন তুলছেন। সরকারি তরফে এর কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

সিপিএম, বিজেপির মতো বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনামা দেখে বিষয়টি বোঝার পরে তাঁরা বিশদ মতামত দিতে পারবেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ সব শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু বাস্তবে কী হবে? কিছু লোককে টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এ সব ব্যবস্থা। দলের লোকেরাই এ সব টাকা লুটেপুটে খাবে।’’

আরও পড়ুন: বিজেপির টিকিটে বাংলায় প্রার্থী বলিউডের একঝাঁক? মুম্বইয়ে বৈঠকের পর জোর জল্পনা

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘অতীতে কৃষকদের জন্য অনেক কিছুই ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু কার্যকরী হয়নি। কিসান মান্ডি নিয়ে রাজ্য অনেক কিছু বলেছিল। কিন্তু এখন সেখানে ফড়েদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন