শীতের রাতে কুয়াশার সুযোগে পাচারের আশঙ্কা বাড়ছে। নিজস্ব চিত্র
কুমারগঞ্জের বটুন অঞ্চলের মাধবপুর সীমান্ত। বরাবর কাঁটাতারের বেড়া। উভয় দিকেই বিএসএফ এবং বিজিবি-র কড়া নজরদারি। তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। লোক ধরে অনায়াসে সীমান্ত টপকে এপারে ঢুকে পড়ে যায়। পাসপোর্ট-ভিসার কোনও দরকার নেই। শুধু ওপারের দালালকে ধরলেই সীমান্ত টপকানোর ছাড়পত্র মিলে যাবে। সীমান্তে ম্যানেজ করার অসীম ক্ষমতা ওই ‘দালালভাই’দের। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা বেষ্টিত দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের প্রায় সবটাই কাঁটাতারের বেড়ায় ঘিরেও যদি ওই একটি এলাকার অনুপ্রবেশের ধরনটা এমন হয়, তবে হিলি সীমান্তের অবস্থাটা কেমন?
বেশ কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়াবিহীন হিলি ব্লকের তিন দিকই উন্মুক্ত। তার উপর শোওয়ার ঘর ভারতে তো কলতলা বাংলাদেশে—এমন এক অবস্থার মধ্যে হিলির অধিকাংশ মানুষ। সেই ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে এই অবস্থা। সেই সুযোগও নেন অনেকে।
বৈধ নথিপত্র ছাড়াই ওপার থেকে এপারে অবাধ অনুপ্রবেশের সঙ্গে চলছে চোরাকারবার। রাত বাড়লেই পতিরাম ঠাকুরপুড়া ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হিলির দিকে গরু নিয়ে ছোটে ঘেরা দেওয়া ট্রাক। ভিতরে কী আছে, বাইরে থেকে দেখার উপায় নেই।
সীমান্ত জুড়ে সতকর্তা আর বিএসএফের কড়াকড়ির মধ্যে কখনও কেউ এপারে ধরা পড়ে গেলেও চিন্তা নেই। শোনা যায়, ওপার হিলির এক ভাই আছেন। টেলিফোনেই তাঁর নির্দেশ পৌঁছে যায় এপারের পরিচিতের কাছে।
তবে সব সময় যে তা কাজে আসে না, তা-ও বোঝা যায়। গত কয়েক মাসে হিলি সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে টপকে এপারে ঢুকে অন্তত ৪০ জন অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ এবং পুলিশ হাতে ধরা পড়েছে। হিলি থেকে বালুরঘাটে যাওয়ার সময় বাসে তল্লাশি চালিয়ে বিএসএফ বেশ কয়েকজনকে ধরেছে। কিন্তু হাঁটা পথ যারা ধরছে, তাদের হিসেব প্রশাসনের জানা নেই। তা ছাড়া, হিলি বাজার থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার উত্তর দিকে পূর্ব আপতোর অঞ্চলের কাঁটাতারহীন বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত গ্রাম হাঁড়িপুকুর যেন ভারতভুক্ত হয়েও ভারতে নেই। লাগোয়া বাংলাদেশের বাগমারা গ্রামের মধ্যে দুদেশের ১০-১২ ইঞ্চি উঁচু গুটি কয়েক ত্রিকোণ আকারের সীমান্ত পিলার শুধু হাঁড়িপুকুরকে ভারতভুক্ত করে রেখেছে। হাঁড়িপুকুরের প্রায় দেড়শো পরিবারের অধিকাংশের পেশা কাপড় বিক্রি। গাঁট ভর্তি শাড়ি, বেডশিট থেকে জামাকাপড়ের ছোট ছোট দোকানও গ্রামে রয়েছে। এপার থেকে বস্ত্র সামগ্রী কিনে গাঁট বেঁধে সাইকেলে চাপিয়ে গ্রামে ঢোকার আগে বিএসএফ পরিচয়পত্র দেখে। প্রয়োজন মনে করলে গাঁটের বস্তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। কখনও হয় না।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ের জঙ্গি ডেড়ায় বিস্ফোরণের পর সেখানকার তৈরি প্রচুর আইইডি হিলির মতো সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে বাংলাদেশে পাচারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। আবার ২০০৬ সালে লস্কর ই তৈবার জঙ্গি আলি আহমেদ হিলি সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে কাশ্মীরে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছিল। হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে বহির্বাণিজ্যের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে চোরাকারবার চালু রয়েছে। এপার থেকে বস্তাভর্তি করে জিরা, কাপড়, প্রসাধন সামগ্রী থেকে নেশার ওযুধপত্রসহ গবাদি পশু অবাধে ওপারে পাচার হচ্ছে।