লড়াইয়ে পিছিয়ে ভারতই: অমর্ত্য

সোমবারের অমর্ত্য এ রকমই। বিভিন্ন মুহূর্তে, বিভিন্ন মেজাজে। সকালে লা মার্টিনিয়ার গার্লস স্কুলে প্রকাশ করেছেন কন্যা নন্দনার নতুন বই, ‘টকি টাম্বল অব জাম্বল ফার্ম’। সন্ধ্যায় তাঁকে নিয়ে নন্দনে দেখানো হল সুমন ঘোষের তথ্যচিত্র ‘দ্য আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান’।

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৬
Share:

আনন্দ-মুহূর্ত: অমর্ত্য সেনের লেখা বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করছেন সুকান্ত চৌধুরী। সোমবার আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে। নিজস্ব চিত্র।

তাঁর ৮৩ বছরের জীবনবৃত্তান্তে তিনটি দেশেরই গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি। জন্মভূমি ভারত, অতঃপর ব্রিটেন এবং আমেরিকা।

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতার এক অনুষ্ঠানে সেই তিন দেশেই গণতন্ত্র যে প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, জানিয়ে দিলেন অমর্ত্য সেন। তাঁর বক্তব্য, গণতন্ত্রের জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আমেরিকা সবচেয়ে বেশি লড়ছে। ব্রিটেন তার পরই, ব্রেক্সিট সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়ছে। কিন্তু তিন দেশের মধ্যে ভারত গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াইয়ে এখনও পিছিয়ে।

তিন দেশেই ‘পোস্ট ট্রুথ’-এর জমানা, সবার উপরে সোশ্যাল মিডিয়া সত্য, তাহার উপরে নাই। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ সে কথাও বলতে ছাড়লেন না, ‘‘ব্রেক্সিট বা ট্রাম্প নিয়ে কথা বললেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে চার রকম কথায় ভরে যায়। কোন কথা কোন দিক থেকে সৃষ্টি হয়েছে বোঝাও যায়।’’ তার পরই তাঁর নিদান, ‘‘কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াকে সোশ্যাল মিডিয়া দিয়েই প্রতিহত করতে হয়।’’

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়া মানেই এই বাংলায় এখন বসিরহাট! সেখানকার গোলমাল নিয়ে সকালবেলাতেই কলকাতা বিমানবন্দরে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। অমর্ত্য বলছিলেন, ‘‘চিন্তার কথা। কারও উস্কানিতে এ সব হচ্ছে কি না, তা নিয়ে চিন্তা করার কারণ আছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার
এই কথার উত্তরে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, ‘‘অত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব! কিন্তু দূর থেকে এ সব না বলে ওঁর সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত। বসিরহাটের সাম্প্রদায়িক সমস্যার পিছনে রাজনৈতিক কুকার্য নেই, আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতা।’’

আরও পড়ুন: অভাবের ঠেলা, লাঙল টানছে নাবালিকারাই

হয়তো এটাই ট্যাকটিক— স্ট্র্যাটেজি থেকে যা আলাদা! অমর্ত্য সোমবার সন্ধ্যাতেই বলছিলেন, ‘‘বিজেপির ট্যাকটিক বিরোধীদের চেয়েও শক্তিশালী। কংগ্রেস ও অন্যরা অপেক্ষায় থাকল, বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল। বিজেপি দলিত প্রার্থী দিল, প্রত্যুত্তরে বিরোধীরাও দলিত প্রার্থী দিল।’’
সুপটু কৌশলে মোদী, ট্রাম্পরা প্রতিপক্ষকে সংখ্যার খেলায় হারিয়ে দেন ঠিকই, কিন্তু সেটাই গণতন্ত্র নয়, বললেন তিনি।

সোমবারের অমর্ত্য এ রকমই। বিভিন্ন মুহূর্তে, বিভিন্ন মেজাজে। সকালে লা মার্টিনিয়ার গার্লস স্কুলে প্রকাশ করেছেন কন্যা নন্দনার নতুন বই, ‘টকি টাম্বল অব জাম্বল ফার্ম’। সন্ধ্যায় তাঁকে নিয়ে নন্দনে দেখানো হল সুমন ঘোষের তথ্যচিত্র ‘দ্য আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান’। তার পরই দর্শকদের প্রশ্নের উত্তরে জানালেন গণতন্ত্রের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জের কথা।

চ্যালেঞ্জ যে কত জায়গায়! সন্ধ্যায় নন্দনে ওই তথ্যচিত্র দেখানোর একটু আগে আইসিসিআরে প্রকাশিত হয়েছে আনন্দ থেকে তাঁর নতুন বাংলা বই ‘ফার্স্ট বয়দের দেশ।’ প্রকাশ করেছেন ইংরেজির অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। অমর্ত্য সেখানে রসিকতাও করতে ছাড়েননি। কখনও বাংলা ‘ফড়ে’ শব্দটি উঠে যেতে বসেছে বলে আক্ষেপ, আবার কখনও টেনে এনেছেন ঋগ্বেদ। কে এই বিশ্বপ্রপঞ্চের স্রষ্টা? সদ্যপ্রকাশিত বইয়ে অমর্ত্যর স্বীকারোক্তি, ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে যে ১২৯ নম্বর সূক্তে বলা হয়েছে, ‘কেবল তিনিই জানেন, যিনি সর্বোচ্চ স্বর্গ থেকে একে দেখেন — অথবা তিনিও জানেন না’! এই কথাটা বলে অমত্যর সংযোজন, ‘‘এই সংশয়ও তো বেদবাক্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন